লোকসভা ভোটের প্রায় আড়াইমাস কেটে গিয়েছে। তবুও শান্তি অধরা ভাটপাড়ায়। এখনও ঘরছাড়া শতাধিক পরিবার। এলাকাবাসীদের কাছে খানিকটা গা-সওয়াই হয়ে গিয়েছে এই বোমা-গুলির আওয়াজ। পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বস্ত করা হলেও এখনও আতঙ্ক কাটেনি কাঁকিনাড়ার ৬ বা ৭ নম্বর সাইডিংয়ের বাসিন্দাদের। এরকম উত্তপ্ত পরিস্থিতিতেই গত বুধবার কাঁকিনাড়া ভাটপাড়ার অশান্ত এলাকা পরিদর্শনে এলেন সমাজকর্মী তিস্তা শীতলভাদ।
এদিন সকালে তিস্তা ও তাঁর সংস্থা সিপিজির (সিটিজেন ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস্) কর্মীরা এলাকার মানুষের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলেন। তাদের অভাব অভিযোগ এবং প্রায় আড়াইমাস ধরে চলা এই অশান্তির কারণ জানতে চান।বেশিরভাগ বাসিন্দারই চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। ঘরের মহিলারা থাকলেও পুরুষরা এখনও ঘরছাড়া। রাজ্য প্রশাসনের তরফ থেকে আক্রান্তদের ঘরবাড়ি মেরামত করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা যে বাস্তবে হয়নি, এ নিয়েও ক্ষোভ উগড়ে দেন স্থানীয়রা। ঘরের আলমারি থেকে আসাবাবপত্র সব কিছু লুঠ করেছে দুষ্কৃতিরা। বস্তুত, তিস্তা শীতলাভাদ এদিন নিজে চোখেই দেখলেন,এই ‘বধ্যভূমি’র বাস্তব পরিস্থিতি। কেটে দেওয়া জলের লাইন, উঠোনে উলটে পরে থাকা টিভি-ফ্রিজ,বাড়ির দেওয়ালে বোমার দাগ স্পষ্ট। এলাকাবাসীরা বলছেন স্থানীয় প্রশাসন নিষ্ক্রিয় থেকে অপদার্থতার পরিচয় দিচ্ছেন। তাদের মতে, ইচ্ছে করেই ভাটপাড়ার পরিস্থিতি খারাপ সেটি তুলে ধরার জন্যই প্রশাসন নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে। তাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্যই তাদের বলির পাঁঠা করা হচ্ছে।
স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব এই অশান্তির জন্য প্রথম থেকেই দায়ী করেছে, ভাটপাড়ার ‘বাহুবলী’ নেতা তথা ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং-কে। যদিও অর্জুন পুলিশ-প্রশাসনের ব্যর্থতাকেই এই অশান্তির জন্য দায়ী করে এসেছেন। এমনকি ভাটপাড়া উপ-নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী মদন মিত্রকেও ‘বহিরাগত’ এনে ভাটপাড়াকে অশান্ত করার জন্য দুষেছেন বিজেপি সাংসদ। দোষারোপ-পাল্টা দোষারোপের এই খেলায় অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন রাজু সাউ, রিজওয়ান রহমনের মতো সাতে-পাঁচে না থাকা মানুষগুলো। তিস্তাকে কাছে পেয়ে এদিন নিজেদের কষ্টের কথা উজাড় করে দিয়েছেন স্থানীয় মানুষ। যদিও তিস্তা ও তাঁর সহকর্মীরা এলাকার ছাড়ার সাথে সঙ্গে সঙ্গেই এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বাধ্য হয় রাজু-রিজওয়ানদের অনেকে। ক্রমাগতঃ বোমাবাজি চলছে বলে পুলিশও টানা এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে। অভিযোগ বেশ কিছু ক্ষেত্রে তল্লাশির নামে পুলিশ দাদাগিরি ফলাচ্ছে।
কাঁকিনাড়ার ‘বধ্যভূমিতে’ দাঁড়িয়ে পদ্মশ্রী জয়ী সমাজকর্মী অবশ্য দায়ী করেছেন স্থানীয় রাজনীতিকদেরই। তিস্তার মতে, রাজনৈতিক কান্ডকারখানাই এদেশে বিভেদে সৃষ্টি করে। তাই এসবকে গুরুত্ব না দিয়ে সুস্থ চেতনা সম্পন্ন মানুষদের উচিত, একজোট হয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এই হিংসাত্মক পরিবেশকে সরিয়ে সুস্থ সমাজ গড়ে তোলা। কাঁকিনাড়া-ভাটপাড়ার বর্তমান অবস্থার গুরুত্ব বুঝে, তিস্তা শীতলাভাদের মতো সমাজকর্মীর দিল্লি থেকে এসে সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শনকে যথেষ্ট অর্থবহ বলে মনে করছেন স্থানীয় শান্তিপ্রিয় মানুষ। আগামীদিনে তাঁর সংস্থা ‘সিপিজি’ কাঁকিনাড়ার পরিস্থিতি নিয়ে সর্বভারতীয় স্তরে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করবে বলেও এদিন জানান, এই বিশিষ্ট সমাজকর্মী।
Picture Courtesy – Facebook Page of Teesta Setalvad
Author Profile

Latest entries
EXCLUSIVE NEWS2020.10.20মানুষের থেকেও বেশি বিশ্বাসযোগ্য ওরা! ২৫টি কুকুর এবং ৯টি বেড়াল নিয়ে ভরা সংসার যুবতীর!
EXCLUSIVE NEWS2020.06.09ফুটবল স্টেডিয়ামে ৫ মিটারের সামাজিক দূরত্ব মেনেই হল চাকরির পরীক্ষা
EXCLUSIVE NEWS2020.05.25ঈদে চূড়ান্ত সম্প্রীতির নজির ফেসবুক পোস্টে, শুভেচ্ছা বার্তায় আপ্লুত নেট-দুনিয়া
EXCLUSIVE NEWS2020.04.19লকডাউনেও রেশন ডিলারের চুরি, পুলিশের সক্রিয় ভূমিকায় ধরা পড়লো অভিযুক্ত!