কলমে রাজীত বাগ ও অঙ্কুর চক্রবর্তী
যখন আগ্রাসন এতোটাই স্থূলভাবে হয়, আপনার মস্তিষ্কের সূক্ষ্মতা ঢাকা পড়ে যায়। এই যেমন ধরুন হিন্দি বলয়ের একটা ধারাবাহিক, ‘তারক মেহতা কা উল্টা চশমা’। এক বেসরকারী টিভি চ্যানেলের এই ধারাবাহিকের বিরাট জনপ্রিয়তা বাংলার দর্শকের কাছেও। জনপ্রিয়তা এমনই পর্যায়ে যে ২০১৭ সালে এই অনুষ্ঠানের স্রষ্টার মৃত্যুতে আমরা রীতিমত ভাব-গদগদ পোস্ট দিয়েছিলাম সামাজিক মাধ্যমের পরিসরে। অথচ এই ধারাবাহিক, যা নিজেকে “আমরা আসল ভারতের চিত্র দেখাই” বলে দাবী করে। তার মধ্যে দিয়ে মূলতঃ স্টিরিওটাইপ ক্যারিকেচার বা জাতিগত অপমানজনক ব্যঙ্গচিত্র পরিবেশন করা হয় রীতিমতো স্থূলভাবে। আপনি নিজের অজান্তেই নিজের কাছে ঠিক সেরকম হাসির খোরাক হয়ে যান, যেরকমটি এই অনুষ্ঠানের পরিবেশকগণ আপনাকে দেখাতে চায়।
আসুন, এই ধারাবাহিকের কিছু বিষয়ের দিকে তাকানো যাক। ধারাবাহিকে কিছু পরিবার রয়েছে, সকলেই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের নাগরিক। সিরিয়ালের মুখ্য পরিবারটি হল গুজরাটি। দ্বিতীয় মুখ্য পরিবার মহারাষ্ট্রের মানুষ কারণ সিরিয়ালটি মুম্বই কেন্দ্রিক। এছাড়াও আছে পাঞ্জাবি পরিবার যারা গাড়ির ব্যবসা করেন। কিন্তু তাদের মাথায় বুদ্ধি নেই, অর্থাৎ পাঞ্জাবি মাত্রই নির্বোধ। ঠিক যেমনটা হিন্দিভাষী মাধ্যমগুলি চিরকাল দেখিয়ে এসেছে ‘সর্দারজি জোকস’-এর ঘরানার মাধ্যমে। এছাড়া আরও একটি পরিবার আছে তারাও গুজরাটি। এই ফ্যামিলি সর্বাধিক বুদ্ধিমান এবং শিক্ষিত। তারপর একটি দম্পতি যার বউ বাঙালি এবং বর দক্ষিণ ভারতীয়। এখানেও স্টিরিওটাইপ ক্যারিকেচার সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। দক্ষিণ ভারতীয় বর কৃষ্ণকায় এবং তথাকথিতভাবে অসুন্দর। এই চরিত্রের বাঙালি বউ সুন্দরী। কেবল এই বৈপরীত্যের জন্যই সে এক মজার পাত্র। সবাই তাকে নিয়ে মজা করে। যেহেতু বাঙালি বউ সুন্দরী, তাই ওই মুখ্য গুজরাটি পরিবারের কর্তা তার পিছনে ঘুর ঘুর করে বেড়ায়। অর্থাৎ হিন্দি মাধ্যমের চিত্র অনুযায়ী বাঙালি নারী মাত্রেই সহজলভ্য ভোগ্যপণ্য। এছাড়াও একজনই মুসলিম রয়েছেন ধারাবাহিকে। তিনি থাকেন ওই আবাসনের বাইরে, তার ছোট্ট পানের দোকান। মজার ব্যাপার ওই সিরিয়ালে সবাই অর্থাৎ গোটা ভারতের লোক কোনও কারণে আনন্দ পেলেই একটি মাত্র নাচ করেন। সেটি হল গুজরাটি নাচ। অথচ এই ধারাবাহিক বুক বাজিয়ে বলে, ভারতবর্ষ কেমন তার ছোট একটি পরিবেশনা ওই ধারাবাহিক। এই ভাবেই বুঝিয়ে দেওয়া হয় এই বৈষম্যগুলিই স্বাভাবিক। বাঙালি মেয়ে মানেই সহজলভ্য, দক্ষিণ ভারতীয় মানেই বিশ্রী। এভাবেই এমন এক আগ্রাসনের জ্বলন্ত কড়াইতে সেদ্ধ হয় আপনার মন। সেই প্রক্রিয়া এতোই ধীরগতির, যে আপনি বুঝতেও পারছেন না সেদ্ধ হতে হতে আপনি কখন নিজেকেই ঘৃণা করতে শুরু করেছেন ‘সহীহ হিন্দুস্তানী’ হতে চেয়ে।
এগুলি স্বাভাবিক নয়। নিপীড়ন, দাসত্ব, ঘেন্না, বৈষম্য কখনও স্বাভাবিক নয়। ঘেন্না-বৈষম্যের এই ফসল তোমার মনের শস্যাগার পূর্ণ করার আগেই জোট বাঁধার সময় এসেছে।
Author Profile

Latest entries
Dating Tips2 months agoThe Ultimate Guide To Online Dating
EXCLUSIVE NEWS10 months agoবাংলার সরকারী পদে রাজ্যের ভূমিপুত্র সংরক্ষণের দাবীতে হুগলি জেলা বাংলা পক্ষ নামল রাস্তায়
EXCLUSIVE NEWS2021.01.05পদ্ম-দুর্গে ঘাসফুলের শিকড় মজবুত করতে যাচ্ছেন অভিষেক, গঙ্গারামপুর স্টেডিয়ামে চলছে শেষ লগ্নের প্রস্তুতি!
EXCLUSIVE NEWS2020.10.13পুজোয় বয়স্করা কীভাবে আটকাবেন মারণ-রোগকে? শ্রীরামপুর আইএমএ দিল তারই হদিশ!