কলমে – বিশাল নন্দী
উত্তর হাওড়ার পরিচিত নাম সালকিয়া। এই অঞ্চলের জমিদার ছিলেন গীতিকার পুলক বন্দোপাধ্যায়ের পূর্ব পুরুষরা। তাদের জমিদারির আমলে বিশেষ কোনো পুজো হতো না এই অঞ্চলে। পুজো বলতে ছিল জমিদার বাড়ির দুর্গোৎসব। বছরে ওই একটি বারের জন্যই জমিদার বাড়ির দরজা খোলা হত এলাকার মানুষের জন্য। এই ভাবেই সুখে-দুঃখে দিন কাটত। সেই সময়ে হঠাৎই এক মহামারী দেখা দেয় চতুর্দিকে। বহু মানুষ না খেতে পেয়ে অনাহারে মারা যেতে থাকেন। প্রাণরক্ষার জন্য অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে থাকে। ইতিমধ্যে জমিদারও সাধারণ মানুষের এই দুর্দশায় পড়ে গেলেন গভীর চিন্তায়। কথিত আছে, ঠিক এমনই এক সময় মা মহামায়া কালীরূপ ধারণ করে স্বর্গ হতে মর্ত্যে নেমে আসনে। মা নাকি জমিদারকে স্বপ্নাদেশ দিয়ে তাঁর ফলহারিনী রূপের পুজোর নির্দেশ দেন। এমনকি তিনি এও বলেন যে, তাঁর পূজার জোগাড় তিনি নিজেই করবেন। মা বলেন যে, ব্যানার্জী বাগান অশ্বত্থতলা সংলগ্ন পুকুর থেকেই উঠে আসবে তাঁর গয়না ও পুজোর বাসনপত্র। অবশেষে নিয়ম মেনে পুজোর দিন ঠিক হয়। পুজোর ঠিক আগের দিনই একটি কাগজে যা যা গয়না ও বাসনপত্র লাগবে তা লিখে সেই পুকুরের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। পুজোর দিন এলাকার বাসিন্দারা পুকুর ঘাটে যেতেই এক অলৌকিক ঘটনা লক্ষ্য করলেন। তারা দেখলেন পুকুরের ঘাট ভর্তি গয়না ও বাসনপত্র। জমিদার খবর পেয়ে তিনি নিজে এসে এই দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে যান। তারপর খুব ধুমধাম সহকারে পূজা করা হয় মা ফলহারিনী কালীকে। এই পূজা করেই নাকি মহামারী কেটে যায়।
বর্তমানে সালকিয়া অঞ্চলে প্রচুর ছোট-বড় কালী পুজো হয়ে থাকে। এই এত পুজোর ভিড়ে মানুষ হয়তো ভুলেই গিয়েছেন ফলহারিনী মায়ের কথা। তবে ব্যানার্জী বাগান সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির উদ্যোগে এই পুজো আজও হয়ে আসছে। পুজোর সঠিক বয়স জানা না গেলেও আনুমানিক ২৫০ থেকে ৩০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন এই পুজো। এলাকার বাসিন্দারা যারা পুজোয় উপবাস রাখতেন, তারা নিজেরাই মায়ের ভোগের জন্য পুকুর থেকে কই মাছ ধরতেন। কারণ কই মাছ ভাজা না দেওয়া হলে, মায়ের ভোগ সম্পূর্ণ হত না। মায়ের ভোগের চাল, শাক-সবজি ধোয়া থেকে শুরু করে রান্না করা সবটাই গঙ্গা জলে হয়। আগে এলাকার মা-বোনেরা গঙ্গা থেকে কলসী করে জল নিয়ে আসতেন মায়ের ভোগের জন্য। মায়ের পুজোয় পশু বলি নিষিদ্ধ। বলি দেওয়া হয় শুধুমাত্র ছাঁচিকুমড়ো। গীতিকার পুলক বন্দোপাধ্যায়ের বাড়ির নারায়ণ শিলা, মঙ্গল চন্ডীর ঘট ও বলির খাঁড়া বছরে একটি বারের জন্য ব্যানার্জী বাগান কালী মন্দিরে নিয়ে আসা হয় শুধুমাত্র মায়ের পুজোর জন্য। জমিদার বাড়ির খাঁড়া ছাড়া মায়ের পূজার বলি দেওয়া যাবে না, এটাই নিয়ম।
নিয়মের দিক থেকেও এই পুজো খানিক ব্যতিক্রমী। যেহেতু মায়ের নাম ফলহারিনী কালী তাই, ফল ছাড়া পূজা দেওয়া চলে না। একটি মাত্র ফল হলেও তা মায়ের কাছে নিবেদন করতে হয়। এই কালী মন্দিরের নিয়ম অনুযায়ী নির্জলা উপবাস চলে না এই পুজোতে। কোনো মানুষ যদি মানসিক পূর্ণ করার জন্য দন্ডি খাটেন তাহলে তিনি জল গ্রহন করতে পারেন। সাধারণতঃ আমরা অনান্য কালী পুজোতে দেখে থাকি যে, পূজা শেষে ভোরবেলা বিসর্জন ক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু মা ফলহারিনী কালীকে ভোরবেলা বিসর্জন দেওয়া হয় না। পরের দিন রাত্রি বেলা বিসর্জন দেওয়া হয়। ব্যানার্জী বাগান সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির উদ্যোগে এই পুজো আজও হয়ে আসছে। পুকুর থেকে গয়না ও বাসনপত্র না উঠলেও মায়ের নিজস্ব গয়না ও বাসনপত্র সবই রয়ে গিয়েছে। নিয়ম নিষ্ঠা সহকারে মাকে প্রত্যেক বছর পুজো করা হয়ে থাকে।
Author Profile

Latest entries
Dating Tips2 months agoThe Ultimate Guide To Online Dating
EXCLUSIVE NEWS10 months agoবাংলার সরকারী পদে রাজ্যের ভূমিপুত্র সংরক্ষণের দাবীতে হুগলি জেলা বাংলা পক্ষ নামল রাস্তায়
EXCLUSIVE NEWS2021.01.05পদ্ম-দুর্গে ঘাসফুলের শিকড় মজবুত করতে যাচ্ছেন অভিষেক, গঙ্গারামপুর স্টেডিয়ামে চলছে শেষ লগ্নের প্রস্তুতি!
EXCLUSIVE NEWS2020.10.13পুজোয় বয়স্করা কীভাবে আটকাবেন মারণ-রোগকে? শ্রীরামপুর আইএমএ দিল তারই হদিশ!