এক নজরে প্রাপক – ১. ড. এম. স্ট্যানলি উইটিংহ্যাম (ইংল্যান্ড)
২. ড. জন বি গুডেনাফ (জার্মানি)
৩. ড. আকিরা ইয়োসিনো। (জাপান)
আবিষ্কার – লিথিয়াম-আয়ন রিচার্জেবল ব্যাটারী, যা আজ আপনার হাতে ধরা স্মার্টফোন থেকে গাড়ির ব্যাটারি সব জায়গায় ব্যবহার হয়।
গত ৯ই অক্টোবর ২০১৯-এ রসায়নে নোবেল পেলেন উপরোক্ত তিন বিজ্ঞানী, মানবসভ্যতায় ইতিহাসে যাঁদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে যুগান্তকারী ‘লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির’ জনক হিসাবে। এই সস্তা, সহজলভ্য, হালকা, টেকসই রিচার্জেবল ব্যাটারি আজ গোটা বিশ্ব জয় করে নিয়েছে। হ্যাঁ আপনার হাতের মুঠোয় ধরা ফোনের ভেতরেও সেই একই বস্তু। ‘জীবাশ্ম জ্বালানীর দূষণ থেকে মুক্ত ভবিষ্যৎ বিশ্ব’ এই স্বপ্ন যাদের ছাড়া হয়তো অধরাই থেকে যেত।
কিন্তু কিভাবে এলো এই সাফল্য?
সালটা ‘৭০ এর দশক, আরব-ইজরায়েল এর যুদ্ধ লেগেছে। স্বভাবতই আমেরিকা সহ পাশ্চাত্যের দেশগুলির সমর্থন ইজরায়েলের দিকেই। এই পরিস্থিতিতে চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে আরবের তেল সরবরাহকারী দেশগুলির সংগঠন ‘ওপেক’ (OPEC) আমেরিকা-কানাডার মতো দেশগুলিকে তেল পাঠানো বন্ধ করে দিল। শুরু হল ভয়াবহ পরিস্থিতি। প্রচণ্ড তেলের সংকট, তেলের দাম পাঁচ গুণ বাড়লো। জিনিসপত্রের দামও হল আকাশ ছোঁয়া। ফল? দীর্ঘদিন ধরে পৃথিবী জুড়ে আর্থিক মন্দার ঘন মেঘ। তবে একটা জিনিস পরিষ্কার বোঝা গেল। তেলের সরবরাহের উপর ভরসা করে আর চলবে না। শক্তি সঞ্চয় করার মজবুত উপায় চাই। কাজেই শুরু হল গবেষণা বিশ্বজুড়ে।
ড. উইটিংহাম প্রথম বড় সাফল্য পেলেন। তিনি ব্যাটারির ঋণাত্মক তড়িৎদ্বার বানাতে গিয়ে খুঁজে বের করলেন ‘টাইটেনিয়াম ডাই-সালফেট’ নামে টাইটেনিয়াম ধাতুর এক যৌগ পদার্থ। এটি অনায়াসেই অনেক পরিমাণ চার্জ (আয়ন বা আধান) ধরে রাখতে পারে। তার আণবিক ফাঁকগুলিতে সহজেই ঢুকে যায় লিথিয়াম আয়নগুলি।
এই ব্যাটারির ধণাত্মক তড়িৎদ্বার বানানো হল লিথিয়াম ধাতুর। লিথিয়াম ধাতু অতি সহজেই ইলেকট্রন ত্যাগ করে, চার্জযুক্ত আয়নে পরিণত হওয়ার সহজাত ধর্মের কথা মাথায় রেখে। কিন্তু সমস্যা যে এই ব্যাটারির মাত্র দুই ভোল্টের বেশি বানানো গেল না। আবার ধাতব লিথিয়াম ভীষন রকম বিক্রিয়া প্রবণ। অক্সিজেনের বা জলের সামান্য সংস্পর্শে এলেই অগ্নিসংযোগ ঘটে। সুতরাং আরও গবেষণা দরকার।
পরবর্তী বড় সাফল্য এল ড. গুডেনাফের গবেষনা থেকে ১৯৮০ সালে। তিনি দেখালেন টাইটেনিয়াম ডাই-সালফাইডের তুলনায় কোবাল্ট-অক্সাইড ব্যবহার করলে দুইয়ের জায়গায় প্রায় চার ভোল্ট বিভব প্রভেদ পাওয়া যাচ্ছে, যা যথেষ্ট! আর যৌগটি অপেক্ষাকৃত হালকাও বটে। আলোড়ন পরে গেল বিজ্ঞানী মহলে। এই আবিষ্কারকে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির গবেষণায় এক বড়োসড়ো মাইলস্টোন হিসাবে ধরা হয়। এর কিছুদিন পর ১৯৮৫-তে ‘ড. ইয়োসিনো’ গবেষণার মাধ্যমে বানিয়ে ফেললেন প্রথম ব্যবহার্য ‘লিথিয়াম-আয়ন’ ব্যাটারি। এতে পূর্বের মতো অগ্নিসংযোগের ভয় নেই। তিনি কার্বন দিয়ে তৈরি এক পদার্থ নিলেন যার নাম ‘পেট্রোলিয়াম কোক’। এ বড়ো মজার জিনিস। এই পদার্থ আণবিক স্তরে একরম জলের মতো। তাতে সুবিধা হল এই যে ধাতব লিথিয়াম অণুগুলির ওপর ‘পেট্রোলিয়াম কোক’ চেপে গেল চাদরের মতো। এবার আমাদের ইচ্ছে মতো সেই চাদরের ফাঁক দিয়ে ঢুকবে আর বেরোবে, চার্জ হবে ডিসচার্জ হবে, অগ্নিসংযোগও হবে না। ব্যাস কেল্লা ফতে!
শেষ পর্যন্ত বাজারে এই ব্যাটারি এলো ১৯৯১ সালে। তারপর থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বিগত ৩০ বছর আরও গবেষণা হয়েছে। ব্যাটারি আরও হালকা, মজবুত, আকারে ছোট্ট করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে ধারণ ক্ষমতা।আজ এর ব্যবহারিক ক্ষেত্র এতটাই ব্যাপ্ত যে সব মিলিয়ে এই ব্যাটারি ছাড়া পৃথিবী প্রায় অচল। সেই কথা মাথায় রেখেই ‘রয়্যাল সুইডিস একাডেমি’ বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করল বর্তমান কালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তিন বিজ্ঞানীকে।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ
The Nobel Prize in Chemistry 2019. NobelPrize.org. Nobel Media AB 2019.
https://www.nobelprize.org/prizes/chemistry/2019/summary/
Author Profile

Latest entries
Editorial2019.12.11আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ কি গণ-নজরদারি ব্যবস্থার আওতায় আসতে চলেছে?
EXCLUSIVE NEWS2019.11.08বেঙ্গালুরুতে বাঙালির বিপদে পাশে থাকতে মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি বাংলা পক্ষের
মেঘে ঢাকা তারা2019.11.03ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়েও মানবিকতা এই ট্রান্স-কন্যার, ছোট্ট সাক্ষাৎকার!
EXCLUSIVE NEWS2019.11.03কলকাতায় হেনস্থা খোদ হাইকোর্টের আইনজীবী, আম জনতার নিরাপত্তা কোথায়?