দমনমূলক পদ্ধতিতে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা এবং ৩৫এ ধারা বাতিল করে তাকে কর্পোরেটের মৃগয়াক্ষেত্র বানানোর বিরুদ্ধে পথে নামলেন কলকাতার সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। প্রবল বৃষ্টি মাথায় নিয়েই যাদবপুর এইট বি বাস-স্ট্যান্ড থেকে শুরু হয় এই মিছিল। একশো জনেরও বেশি পড়ুয়া তাতে অংশ নেন। মিছিলে স্লোগান ওঠে, “রাষ্ট্রপ্রেমের মোহ ছাড়ো, দেশপ্রেমের স্বপ্ন গড়ো।” মিছিলের এক মুখ দেবোপম জানালেন, “মেকি ‘এক দেশ এক আইন’ নয়, প্রশ্নের উল্টোদিকে দেশদ্রোহী তকমা দাগিয়ে দেওয়া নয়। ভারতবর্ষের বহুমাত্রিকতাকে তুলে ধরা, প্রকৃত দেশপ্রেমের স্বপ্ন মেলে ধরা, এটাই হোক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সকল মানুষের আশু কর্তব্য।” দেবোপমের বক্তব্যের পক্ষেই সাক্ষী দিচ্ছিলো একটি পোস্টার। তাতে লেখা ছিল, “জোর করে টুঁটি চেপে কোনোদিন স্থায়ী অখণ্ডতা তৈরী করা যায় না। খণ্ড খণ্ড সম্পর্ক কোনো এক বৃহত্তর স্বপ্নে ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে অখণ্ড হতে পারে।” এভাবেই কলকাতার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ঝড়-বৃষ্টি পরোয়া না করে রাজপথ দখল করে জানান দিলেন, কাশ্মীরের ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের এই অতর্কিত হামলার পুরোপুরি বিরুদ্ধে তারা।
যদিও আমাদের মনে প্রশ্ন ছিল চারিদিকে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে কাশ্মীর নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপকে সমর্থনের ঝড় উঠছে। সেখানে কেন কলকাতার যুবসমাজ এটির বিরোধিতা করছেন। আমরা কথা বললাম, অম্লান হাজরার সঙ্গে। তিনি একান্ত আলাপচারিতায় দিলেন ‘এক্সক্লুসিভ অধিরথ’-এর প্রশ্নের উত্তর।
অনেকেই যখন ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারার বিলুপ্তি সমর্থন করছেন তখন আপনারা এর বিরুদ্ধে কেন?
কাশ্মীর কোথায় যাবে, কী করবে সে নিয়ে বিভিন্ন মতামত থাকতেই পারে। কিন্তু যে পদ্ধতিতে এটি ঘটানো হয়েছে, কোনও আলোচনা না করেই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া, তা আসলে রাষ্ট্রের ফ্যাসিস্ট বৈশিষ্ট্যকেই তুলে ধরে। আমাদের লিফলেটের বয়ান ছিল, কাশ্মীরকে কর্পোরেটের মৃগয়াক্ষেত্র করা চলবে না। অথচ কর্পোরেটের(আম্বানি, আদানি গোষ্ঠী) হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে কাশ্মীরকে। কাশ্মীর তথা গোটা দেশের মানুষের ভালো থাকাটাই প্রধান আমাদের কাছে। কাশ্মীর নিয়ে কিছু বলতে গেলেই ভেসে আসে মন্তব্য, যেখানে পাকিস্তানে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। আমাদের এরকম কোনও বক্তব্যই নেই যে কাশ্মীরকে পাকিস্তানের হাতে তুলে দিতে হবে অথবা কাশ্মীরকে স্বাধীন করতে হবে। আমরা সেটা বলারই কেউ নই, আমাদের সেই এক্তিয়ারই নেই। কাশ্মীর সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে যেভাবে জোর করে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং সংবিধানের সাধারণ জায়গাগুলি অস্বীকার করা হচ্ছে আমরা তারই বিরুদ্ধে।
এই ধারা দুটি বিলোপের বিরোধিতা পাকিস্তানও করছে, দেশের বিরোধীরাও করছেন, সেই সঙ্গে আপনারাও করছেন! এই নিয়ে কী বলবেন?
প্রথম ব্যাপার হল ৩৭০ ধারা, এটি কিন্তু উঠে যায় নি। এটির সংশোধন করা হয়েছে। কারণ দেশের ১০ টি রাজ্য এই ধারার আওতায় পড়ে যারা অতিরিক্ত সুবিধা ভোগ করে। তার মধ্যে রয়েছে মহারাষ্ট্র, মিজোরাম সহ প্রধানমন্ত্রীর রাজ্য খোদ গুজরাটও। আর পাকিস্তান সম্পর্কে আমাদের অবস্থান হল, পাকিস্তান একটি রাষ্ট্র, ঠিক যেরকম ভারত একটি রাষ্ট্র। এখানে দুই দেশের সাধারণ মানুষের কোনও ভূমিকা নেই, তারা পুরোটাই অন্ধকারে। এখানে তো সাধারণ মানুষের মুখ চেয়ে কিছু হচ্ছে না। কাজেই পাকিস্তান এমন মন্তব্যই করবে, যে মন্তব্যে ভারতের ফ্যাসিস্টদেরই সুবিধা হয়। আমরা জানি ভোটের আগে পাক রাষ্ট্রপ্রধান ইমরান খান বলেছিলেন, “মোদী আবার প্রধানমন্ত্রী হন এটি আমি দেখতে চাই।” ফলে রাষ্ট্রপ্রধানরা কূটনীতির দিক দিয়ে নিজেদের আখেরটি ঠিকই গুছিয়ে নেন আর কী! এটি আসলে একটি অঘোষিত সমঝোতা। নারী নিরাপত্তা থেকে অর্থনীতি সব দিক দিয়েই ভারতের সরকার মারাত্মক কঠিন অবস্থায় রয়েছে, পাকিস্তানের অবস্থাও সেরকমই শোচনীয়। তাই দেশের মানুষের রুটি-রুজির যে সমস্যা তা চাপা দিতে অবিলম্বে একটি যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার প্রয়োজন পড়েছে। সেটাই দুই দেশ খেলছে আর সাধারণ মানুষ নাজেহাল হচ্ছে।
পাকিস্তানীরা আগে কাশ্মিরীদের বিয়ে করলে পেয়ে যেতেন কাশ্মীরের নাগরিকত্ব। অথচ কাশ্মীরিরা ভারতের অন্য রাজ্যের কাউকে বিয়ে করলে হারাতেন কাশ্মীরের নাগরিকত্ব। কিন্তু কাশ্মীরে এখন চলবে, ‘এক দেশ, এক আইন’। এটি কি উচিৎ পদক্ষেপ নয়?
সত্যি কথা বলতে, সারা দেশ কেন? সারা পৃথিবীতেই এক আইন চালু থাকা উচিৎ। আমি আগেই বললাম, সারা দেশের দশটি রাজ্যে ৩৭০ ধারা রয়েছে। তাহলে তারা কেন অতিরিক্ত সুবিধা ভোগ করবে তার উত্তর আগে দিতে হয়। কেন পার্লামেন্টের ক্যান্টিনে বিরিয়ানি ৩৫ টাকা এবং সেই একই মানের বিরিয়ানি বাইরে খেতে গেলে দেড়শো টাকা দিয়ে খেতে হবে? কেন ধনঞ্জয়ের ফাঁসি হয় আর রাম-রহিম দিব্বি ঘুরে বেড়ায়? বিবাহের প্রসঙ্গে অবশ্যই নাগরিকত্ব চলে যাওয়া উচিৎ নয়, যে যেখানে খুশি বিয়ে করার অধিকার থাকা উচিৎ। প্রশ্ন হচ্ছে, ‘এক দেশ, এক আইন’ চালু হলে তা সর্বত্রই চালু হওয়া উচিৎ। আম্বানির বাড়ির লোক তিন লাখ টাকার শাড়ি পড়বে, অন্যদিকে তিন লাখ মানুষ অনাহারে না খেতে পেয়ে মরবে এটা ‘এক দেশ, এক আইন’ হতে পারে না। কাশ্মীরে ঐতিহাসিক কারণে প্রচুর নিয়ম হয়েছে যার সবটাই ভালো এটা কেউ বলছে না। কিন্তু তাই বলে তোমার সুবিধার জন্য এবং ফ্যাসিস্ট প্রোজেক্ট কার্যকর করার জন্য যখন যা খুশি করে দেবে এটা তো হতে পারে না।
Author Profile

Latest entries
EXCLUSIVE NEWS2020.10.20মানুষের থেকেও বেশি বিশ্বাসযোগ্য ওরা! ২৫টি কুকুর এবং ৯টি বেড়াল নিয়ে ভরা সংসার যুবতীর!
EXCLUSIVE NEWS2020.06.09ফুটবল স্টেডিয়ামে ৫ মিটারের সামাজিক দূরত্ব মেনেই হল চাকরির পরীক্ষা
EXCLUSIVE NEWS2020.05.25ঈদে চূড়ান্ত সম্প্রীতির নজির ফেসবুক পোস্টে, শুভেচ্ছা বার্তায় আপ্লুত নেট-দুনিয়া
EXCLUSIVE NEWS2020.04.19লকডাউনেও রেশন ডিলারের চুরি, পুলিশের সক্রিয় ভূমিকায় ধরা পড়লো অভিযুক্ত!