হুগলী জেলার কালীক্ষেত্র সন্ধানে বেড়িয়ে কিছুটা ঘাবড়ে যাওয়ার দশা। কালী কলকাত্তা ওয়ালী না বলে যদি কালী হুগলীওয়ালী বলি তাহলে কিছু ভুল বলা হয়না। সারা জেলা জুড়ে রয়েছে অনেকগুলি সাধনপীঠ। এই জেলায় কালীক্ষেত্র খুঁজতে গেলে খুব অদ্ভুত ভাবেই চোখে পড়ে এগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে প্রাচীন কিছু ডাকতের নাম। গল্পে কিংবা ইতিহাসে আমাদের জানা যে ডাকাতরা প্রাচীনকালে শক্তির স্বরূপ মা কালীর আরাধনা করতো। কাজেই ডাকাত প্রতিষ্ঠিত কালীই স্বাভাবিক। আজ সেরকমই ডাকাতে কালীর গল্প।
প্রায় ৫০০ থেকে ৫৫০ বছরের পুরনো এক কালী পুজো। যে কালীর নামই ডাকাতে কালী। সিঙ্গুরের পুরুষোত্তমপুর এলাকায় অবস্থিত এই মন্দির। এই কালী মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে নানা লোকশ্রুতি, নানা ইতিহাস আর অবশ্যই ডাকাতদের গল্প। সে গল্পে আবার জড়িয়ে আছেন স্বয়ং মা সারদা দেবী। মন্দিরের সেবাইতদের সঙ্গে আলাপে উঠে এল নানান কাহিনী। কথিত কাহিনী এই যে, অসুস্থ শ্রীরামকৃষ্ণ দেবকে দেখতে কামারপুকুর থেকে দক্ষিণেশ্বর যাচ্ছেন মা সারদা। সন্ধ্যা নেমে গিয়েছে। হঠাৎ ডাকাতির উদ্দেশ্যে তার পথ আটকায় রঘু ডাকাত ও গগন ডাকাতের দলবল। এই সময় হঠাৎ এই দুই ডাকাত সর্দার মা সারদার চোখে রক্তচক্ষু মা কালীর মুখ দেখতে পায়। রঘু আর গগন নিজেদের ভুল বুঝে সারদা মায়ের কাছে ক্ষমা চান। রাত হয়ে যাওয়ার জন্য মাকে তাদের আস্তানায় থাকার ব্যবস্থা করে দেয়।
মা সারদাকে তারা রাতে চাল ভাজা ও কড়াই ভাজা খেতে দেন। কথিত রয়েছে, সেই থেকেই নাকি কালী পুজোর দিন চাল ভাজা আর কড়াই ভাজা প্রসাদ দেওয়া হয়। এই মন্দিরের মুর্তিও রঘু এবং গগন ডাকাতের তৈরী। হ্যাঁ, অবশ্যই মন্দিরের কালী মূর্তি সেই রক্তচক্ষু কালী মূর্তি। আজও এখানে প্রথা মেনে কালী পুজোর দিন শুদ্রদের আনা গঙ্গা জল ঘটে দিয়ে পুজো শুরু হয়। বলি প্রথা আজও আছে মন্দিরে। চার প্রহরে চারবার পুজো ও ছাগল বলি হয়। মাতৃ মূর্তি দুই ডাকাত সর্দার প্রতিষ্ঠা করলেও কালির মন্দির প্রতিষ্ঠা করে স্থানীয় চালকেবাটি গ্রামের মোড়ল পরিবার। উচুঁ ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত এই মন্দিরটি চালা মন্দির। প্রাচীনকালে টেরাকোটার কাজ থাকলেও আজ তা বিলুপ্তপ্রায়। মন্দিরের সামনে রয়েছে নাটমন্দির। তবে এই মন্দিরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় গর্ভগৃহের কাঁঠাল কাঠের তৈরি দরজাটি। কারুশিল্পের সুন্দর নিদর্শন এই প্রাচীন দরজা।
লোককথা, ঐতিহ্য নিয়ে সিঙ্গুরের ডাকতে কালী মন্দির আজও উজ্জ্বল। এই মন্দিরের দেব মাহাত্ম্য এতোই যে স্থানীয় তিনটি গ্রামে এই প্রতিমা ছাড়া অন্য কোনও প্রতিমার পুজো তো হয়না। এলাকায় কোনও বাড়িতেই অন্য কোন প্রতিমা মূর্তির ছবিও টাঙানো থাকেনা। শুধু কালী পুজো নয়, সারা বছরই ভক্ত সমাগমে জমজমাট হয়ে থাকে মন্দির চত্ত্বর ।
Author Profile
