Total Views:
527
শুরু করবো ব্যক্তিগত একটি অভিজ্ঞতা দিয়ে। বছরখানেক আগের কথা। দুর্গাপূজোর সকল প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। পাড়ার দাদারা অমানুষিক পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। একেক দলে ভাগ হয়ে গিয়ে কেউ মন্ডপের থিম ঠিক করছেন, কেউ বা চাঁদা সংগ্রহে বেড়িয়েছেন। কেউ কেউ আবার ধর্মান্ধ পশুদের লোলুপ ও সর্বনাশা দৃষ্টি থেকে বেঁচে থাকার পথ খুঁজছেন। দিদিরাও পিছিয়ে নেই; দাদাদের জলখাবার দিচ্ছেন, উঠোনে ঝাড়ু দিচ্ছেন। এরকমই এক বিকেলে বের হয়েছি। উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে হাঁটাহাঁটি করতে করতে একটা জটলা দেখতে পেলাম। দূর থেকে বাচ্চাকাচ্চাদের বিশাল একটি দল আসছে। তারা কি যেন একটা বলে স্লোগান তুলছে। কাছে আসতেই পরিষ্কার হলো। তারা বলছিলো, ‘মা আসছেন!’ বা ‘দূর্গাপূজোর কয় দিন? ১০ দিন, ১০ দিন!’। অবাক হয়ে দেখলাম স্থানীয় মসজিদের মুয়াজ্জিনের কনিষ্ঠতম ছেলেটাও সেই মিছিলে আছে। যদিও একটু পেছনের দিকে, তবু আছে তো!

ধর্ম বা ধর্মগোষ্ঠী নিয়ে কিছু বলবো না। আমি মুসলিম পরিবারের একজন সন্তান। কেউ কেউ আমার কথার উল্টো মানে বের করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আমার পরিবারের সদস্যদের অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। যেটা বলছিলাম, পৃথিবীর কোনো ধর্মই অন্য ধর্মের প্রতি অসম্মান তৈরি করে নি, কাউকেই ধর্মের জন্য অস্ত্র ধরে নিরীহ মানুষের প্রাণনাশ করতে বলেনি। বিশ্বের সকল ধর্মই শান্তির বাণী প্রচার করেছে এবং সেটা সবাইকে নিয়ে। তাহলে কেন এই অশান্তি? কেন এই হাঙ্গামা? বিবেকবোধকে একটু কাজে লাগালেই বুঝতে পারবো এগুলো কিছু নিকৃষ্ট মানুষের নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য ঘৃণ্য চাল ছাড়া আর কিছুই না। আমরা কেন অন্যের সাজানো খেলায় নিজেদের স্বকীয়তা হারাবো? এই বাঙালি জাতিই পৃথিবীর বুকে শ্রেষ্ঠতম অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ বার বার তৈরি করেছে। তবে কেনো এই উলটো পথে যাত্রা? সময় এসেছে বদলানোর। আপনি হয়তো বা আজ নিজেকে একা ভাবছেন। ধরেই নিলাম আপনি একা। ছোটবেলা সেই লাইনগুলি পড়েন নি? ‘ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল-গড়ে তোলে মহাদেশ, সাগর অতল।’ আসুন বিন্দু বিন্দু বালুকণা দিয়েই নাহয় যাত্রা শুরু করি। একদিন সম্প্রীতির এক মহাদেশের জন্ম হবেই। তার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া গভীর সাগরের ঝিনুক-মুক্তো আরও একবার প্রমাণ করবে-‘বাঙালি উদার জাতি, বাংলা উদারতার প্রাণভূমি।’ মা আসছেন। সবাই প্রস্তুত হোন। আর খোলা রাখুন মনমহলের জানালা। সম্প্রীতি আসবে, সম্প্রীতিকে আসতেই হবে!
Author Profile
-
Faridur Reza Khan (Bangladesh)
-