পশ্চিম বর্ধমান জেলার বিখ্যাত জনপদ আসানসোলের নাম শোনেন নি এমন মানুষ পাওয়াই দুষ্কর। কিন্তু আজকের এই জনবহুল শহর কিন্তু আজ থেকে ৫০০ বছর আগেও ছিল আসান নামের এক ধরনের গাছের জঙ্গলে ভর্তি। এই গাছ এবং ছোট ছোট জলা যা সোল নামে এখানে পরিচিত ছিল। সেই থেকেই নামকরণ হয় আসানসোল।
এই জঙ্গলের ইতিউতি ছোট ছোট কুঁড়েঘর নিয়ে ছিল ছোট ছোট গ্রাম। এখানেই থাকতেন এক বাঙালি ব্রাহ্মণ কাঙালীচরণ। তিনি অত্যন্ত দরিদ্র ছিলেন। রোজ নুনিয়া নদী পায়ে হেঁটে পেরিয়ে তিনি যজমানির কাজ করতে যেতেন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। শীতের এক বিকেলে কোনও রোজগার-পাতি ছাড়াই ফিরে আসেন।পথের ক্লান্তি ও খিদের চোটে একটি গাছের ঠাণ্ডা ছায়ায় বসেই ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। হঠাৎ কিসের একটা আওয়াজে যেন তার ঘুম ভেঙে গেল। দেখলেন দিনের আলো থাকা সত্ত্বেও একটা নির্দিষ্ট অংশ যেন অন্ধকার। একটি ঘাঘরা পরা বুড়ি লাঠি নিয়ে ঠুকঠুক শব্দ করে তাঁর দিকেই এগিয়ে আসছেন। কাঙালীচরণের সারা শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল।
তিনি আবারও অতল ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে দেখলেন সেই বুড়িটি তাঁর কাছে এসে বললেন ‘আর তোকে যজমানির কাজ করতে হবে না।’ তোর কোলে তিনটি পাথর রেখে এলাম। মাঝ খানের পাথরটি হলাম আমি অর্থাৎ ঘাঘরবুড়ি। ডানদিকে মা দুর্গা এবং বাম দিকে বাবা মহাদেব। এরপর সেই শিলা-বিগ্রহ সিঁদুর চর্চ্চিত করে এবং সোনা রূপার গহনায় সাজিয়ে ব্রাহ্মণ পুজো শুরু করেন। এই ঘটনার একশো বছর পরে ১৬২০ সালের ১ লা মাঘ মন্দির নির্মিত হয়। ১লা মাঘকে স্মরণ করেই প্রতি বছর মন্দিরের সামনের মাঠে বসে মেলা।
ইতিহাস বলছে, কাশীপুরের মহারাজাই এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন। প্রতিবছর ১লা মাঘ বিশেষ পুজো এবং মেলার আয়োজন করা হয়। মন্দির-সংলগ্ন অঞ্চলটি আদিবাসী অধ্যুষিত। ‘ঘাঘর’ শব্দটির অর্থ হল ঝাঁজ বাদ্য এবং ঘুঙুর। পুরাণে উল্লেখ রয়েছে, বহু দেবদেবীর পুজোই হতো নৃত্য,গীত ও বাদ্য সহকারে। কাজেই ঘাঘরবুড়ির পুজোও অতীতে সেভাবেই হওয়ার একটি প্রবল সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। এভাবেই যুগের পর যুগ ধরে শীর্ণ নুনিয়া নদীর তীরে অধিষ্ঠিতা রাঢ় বাংলার এক জাগ্রত দেবী ঘাঘর বুড়ি।
চিত্র এবং তথ্য ঋণ – পরিভ্রমণ বৃত্তান্ত
Author Profile

Latest entries
Dating Tips2 months agoThe Ultimate Guide To Online Dating
EXCLUSIVE NEWS10 months agoবাংলার সরকারী পদে রাজ্যের ভূমিপুত্র সংরক্ষণের দাবীতে হুগলি জেলা বাংলা পক্ষ নামল রাস্তায়
EXCLUSIVE NEWS2021.01.05পদ্ম-দুর্গে ঘাসফুলের শিকড় মজবুত করতে যাচ্ছেন অভিষেক, গঙ্গারামপুর স্টেডিয়ামে চলছে শেষ লগ্নের প্রস্তুতি!
EXCLUSIVE NEWS2020.10.13পুজোয় বয়স্করা কীভাবে আটকাবেন মারণ-রোগকে? শ্রীরামপুর আইএমএ দিল তারই হদিশ!