চিত্রঋণ – Google
ইছামতি নদী, যার এক প্রান্তে বাংলাদেশ এবং অপর প্রান্তে ভারত। ভারত-বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা ইছামতি নদী সাতক্ষীরা উপজেলার সীমান্তঘেষা হাড়দ্দার পাশ দিয়ে ছুটে চলেছে বঙ্গোপসাগর অভিমুখে। ইছামতি নদীর তীর ঘেঁষা শ্রীপুর, সুশীলগাঁতী ও দেবহাটা পাশাপাশি তিনটি গ্রাম। ইছামতির ওপারে ভারতের হাসনাবাদ রেল স্টেশন। ব্রিটিশ শাসনকালে এ অঞ্চলে মানুষের দ্বিতীয় ঠিকানা ছিল কলকাতা।
বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গা পুজোর প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষ্যে সীমান্তের বেড়াজাল মুছে দিয়ে কয়েক ঘন্টার জন্য একাকার হয়ে যায় দুই বাংলা। জার্তি-ধর্ম-বর্ণ ভুলে দিনভর এখানে জড়ো হয় উভয় বাংলার লাখো লাখো মানুষ। দশমীতে ইছামতি নদীর দখল নেয় বাংলাদেশ-ভারতের কয়েক হাজার রকমারি নৌকা আর ট্রলার। শুরু হয় দু‘বাংলার মানুষের মিলন মেলা। সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার ইছামতি নদীর তীরে বসে এ মিলন মেলা। ইছামতি নদীর দুই তীরে দেবহাটা উপজেলা পরিষদ ও ভারতের টাকী পৌরসভা পৃথক মিলন মেলার আয়োজন করে। এখানে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ইছামতীর জিরো পয়েন্টে লঞ্চ থেকে ভারতীয় অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান এবং তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ভারত ও বাংলাদেশের মানুষ কতটা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী তা এ মেলা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়। তাই যত বাধাই আসুক না কেন এ মিলন মেলা সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে যুগ যুগ ধরেই বয়ে চলবে। দু‘বাংলার মানুষের এ অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐক্য উভয় দেশের মধ্যে আরও সম্প্রীতি সুদৃঢ় করে তোলে। দেশভাগের অনেক আগে থেকেই সীমান্ত নদী ইছামতি নদীর উভয় তীরে দুর্গা পুজোর শেষ দিন অর্থাৎ বিজয়া দশমীতে মেলা বসে আসছে। দেশ বিভাগের পরও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি সীমান্তের জলসীমারেখা। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে এ মেলা কখনও বন্ধ হয়নি। সারা বছর ধরে শুধু ইছামতি নদীর পাড়ের মানুষ নয়, বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন এলাকার মানুষ এ দিনটির জন্যে থাকে অপেক্ষায়। মেলায় বসে হরেক রকমের দোকান। আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ছাড়াও এখানে আসা মানুষ কিছু কেনাকেটা করে সন্ধ্যার পরে ফিরে যায় যে যার দেশে, যে যার ঘরে। সরেজমিনে দেবহাটা উপজেলার সদর, টাউনশ্রীপুর, ভাতশালা, কোমরপুর এলাকা ঘুরে যেয়ে দেখা যায়।
সীমান্ত নদী ইছামতির টাউন শ্রীপুর থেকে ভাতশালা পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার জুড়ে যত দুরে চোখ যায় ভেসে বেড়ায় শুধু নৌকা আর নৌকা। কোনো নৌকায় প্রতিমা ও মানুষ। আবার কোনো কোনো নৌকায় শুধুই মানুষ। টাউন শ্রীপুরে দেবহাটা উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বানানো হয় মিলন মেলা উপলক্ষে সুসজ্জিত মঞ্চ। বিপরীত দিকে টাকীতে একইভাবে মঞ্চ বানানা হয়। নদীতে বাংলাদেশের জল সীমানা টহল দেয় বাংলাদেশের পতাকাবাহী বিডিআরের স্পিড বোট আর ভারতের জল সীমানায় টহল দেয় ভারতীয় পতাকাবাহী বিএসএফের স্পিড বোট। নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আনন্দ উপভোগ করে কয়েক হাজার মানুষ। বছরের পর বছর ধরে চলে আসা এই মিলনমেলা এলাকার মানুষের সাংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা আবারও প্রমাণ করে ঠাণ্ডা ঘরে বসা নেতা-মন্ত্রীদের তৈরি কাঁটাতারকে আসলে মানুষের আবেগ মানে না।