ডিসেম্বর এলেই পৃথিবীব্যাপী একটি সাজো সাজো রব পড়ে যায়। খ্রিষ্টানরা ছাড়াও সার্বজনীনভাবে দিনটি অনেকেই উদযাপন করে থাকেন। ধর্মীয় আয়োজনে অংশ না নিয়েও বড়দিনের আনন্দ-আয়োজনে অংশগ্রহণ করে থাকেন সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ। বাংলাদেশের বড়দিনের সবচেয়ে বিস্তৃত আয়োজন হয় রাজধানী ঢাকায়। এই অঞ্চলের মানুষের অসাম্প্রদায়িক মনোভাব আর সার্বজনীন ভ্রাতৃত্ববোধ চোখে পড়ে।
আমাদের এই অঞ্চলে ক্রিসমাস পালন করা শুরু হয়েছে আমেরিকারও আগে। তথ্য বলছে, মার্কিন মুলুকে ১৮৭০ সালে ক্রিসমাসের দিনটিতে ছুটির দিন হিসেবে পালন করা শুরু হয়। কিন্তু এখানে প্রথম বড়দিন পালন করা হয় ১৬৬৮ সালে। সপ্তদশ শতকে পর্তুগীজদের মাধ্যমে এই অঞ্চলে খ্রিস্টান ধর্মের প্রচার হয়।১৫৯৯ সালে প্রথম চার্চ তৈরি করেন ওরাই নামক জনৈক পর্তুগীজ যা বাংলাদেশের বৃহত্তর যশোর জেলার কালীগঞ্জে অবস্থিত। এর কয়েকদিন বাদেই শুরু হয় আনুষ্ঠানিকভাবে বড়দিন পালন। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.০৪ শতাংশ খ্রিস্টান হলেও দেশ জুড়ে বড়দিনের উদযাপন বেশ জাঁকজমক সহকারেই হয়ে থাকে। ঢাকা সহ সারা দেশে মোট ৫০০টি গীর্জায় এবার বড়দিন উদযাপিত হতে চলেছে৷ ঢাকার কাকরাইলে খ্রিস্টানদের সবচেয়ে বড় গির্জাটি অবস্থিত।
বাংলাদেশের ক্রিসমাস আয়োজনের কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ক্রিসমাসের খাবারে বিশেষ কেকের পাশাপাশি থাকে পিঠে-পুলি, পোলাও, মাংস ও বিরিয়ানী। ক্রিসমাস ক্যারল বা ক্রিসমাসের গানের পাশাপাশি গাওয়া হয় ভাটিয়ালি গান, কীর্তন, এমনকি রবীন্দ্রসঙ্গীতও। এরকম একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত হলো- ‘আজি শুভ দিনে পিতার ভবনে অমৃত সদনে চলো যাই’। ঢাকার অদূরে সাভারের কিছু গির্জায় আয়োজন করা হয়েছে কীর্তনের। বড়দিনের আয়োজনে খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় রীতির সঙ্গে যোগ হয়েছে দেশীয় সংস্কৃতির নানা উপাদান। তাছাড়া রাজধানীর বড় বড় হোটেলগুলোতে বিশেষ আয়োজন করা হচ্ছে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বা ব্যক্তিগত উপস্থাপনায় নজর কাড়া নান্দনিক আলোকসজ্জার পাশাপাশি সাজানো হচ্ছে ক্রিসমাস ট্রি, রঙিন বাতি, বেলুন আর ফুল দিয়ে। রাতে ঢাকার তেজগাঁওয়ের জপমালা গির্জা সহ অন্যান্য চার্চগুলোতে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। গির্জার বাইরে বড়দিন ও ইংরেজি নতুন বছরের কার্ড, নানা রঙের মোমবাতি, ক্রিসমাস ট্রি, যিশুর মূর্তি সহ পসরা সাজিয়ে বসেছেন অস্থায়ী বিক্রেতারা। এছাড়া রাজধানীর হোটেলগুলো শিশু-কিশোরদের জন্য পাপেট শো, মিউজিক্যাল পারফরমেন্স, জাম্পিং হাউজ ও র্যাফেল ড্র’র আয়োজন করেছে। লক্ষ্মীবাজার, আরমানি টোলা, সায়েদাবাদ, জনসন রোড, তেজগাঁও,মিরপুর, কাফরুল, মোহাম্মদপুর, কাকরাইল, সায়েদাবাদ, গুলশান, বনানী, ইস্কাটন প্রায় সব এলাকার গির্জাগুলোই ইতিমধ্যেই বড়দিনের আয়োজনকে সফল করতে প্রস্তুত।
প্রতিবছর বড়দিনে গির্জাগুলোতে এবং খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। নিয়মিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ছাড়াও আনসার ভিডিপি, বিজিবি মাঠে কর্মরত থাকবে। ডিএমপির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলসহ বিভিন্ন ইউনিট কাজ করে যাচ্ছে। তাছাড়া স্কাউটস, বিএনসিসি ক্যাডেটস, রেড ক্রিসেন্ট সহ বিভিন্ন সামাজিক ও যুব সংগঠনগুলোও এদিন আয়োজনকে সফল করতে নিরাপত্তা ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বড়দিনের আগের এই নিরাপত্তার তোড়জোড় নিয়ে সন্তুষ্ট বংলাদেশের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা।
Author Profile
