লকডাউনে গোটা রাজ্য জুড়ে দেখা গিয়েছে ‘কমিউনিটি কিচেন’। সেই জনতার রান্নাঘরের অন্ততঃ সিংহভাগেরই আয়োজক ছিল বামেদের গণ-সংগঠনগুলি। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ সর্বত্রই বিপদে পড়া খেটে খাওয়া মানুষের পেট ভরিয়েছে এই রান্নাঘর। খুব স্বাভাবিকভাবেই এই তালিকা থেকে বাদ যায়নি উত্তরবঙ্গও।
শিলিগুড়ি মহকুমা, দার্জিলিং জেলা পাহাড় বাদে) শিলিগুড়ি শহর ও শহরতলিতে মোট পাঁচটি রান্নাঘর চলেছে। প্রায় সমস্ত ওয়ার্ডেই বসেছিল জনতা বাজার। এছাড়া বাড়ি বাড়ি খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। বাম যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই এবং কর্পোরেশনের তরফে স্যানিটাইজ করা হয় বিভিন্ন ওয়ার্ড। অসুস্থ হওয়ার আগে শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য নিজেই কাজটির তদারকি করতেন। ডিওয়াইএফআই এবং এসএফআই যৌথভাবে চালু করে হেল্প লাইন। বিশেষতঃ বয়স্কদের বাড়ি বাড়ি ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হয়। এমনকি এই হেল্প লাইনের মাধ্যমে রক্তের জোগাড়ও করা হয়। ডিওয়াইএফআই’র তরফে রক্তদান শিবির হয় দুটি।
নকশালবাড়ি সিপিআইএম’র উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছিল কমিউনিটি কিচেন। এপ্রিল মাসের ২ তারিখ থেকে যাত্রা শুরু করে দীর্ঘ ৫০ দিন চলে এটি। সূত্রের খবর, ৩০০-৪০০ জনের খাদ্য-সংস্থান দিয়ে শুরু হলেও অচিরেই তা পাঁচ ছাড়ায়। নকশালবাড়ির ৯ টি গ্রামে প্রত্যেক দিন ৩০০-৪০০ জনের খাবার পাঠানো হতো গাড়ির মাধ্যমে। এছাড়াও নকশালবাড়ি এসএফআইয়ের তরফে ১০০ টি পরিবারের হাতে প্রয়োজনীয় খাবার তুলে দেওয়া হয়। যার তালিকায় ছিল চাল, ডাল, আলু, তেল, সয়াবিন, টমেটো, বিস্কুট, লবণ।) এছাড়াও তাঁরা প্রায় ৪০০-৫০০ জন মেয়ের হাতে বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন তুলে দেন।
খড়িবাড়ি বামপন্থী গণসংগঠনের যৌথ উদ্যোগে কমিউনিটি কিচেন গড়ে ওঠেছিলো ১২ মে। যদিও পরবর্তী ২৬ মে এলাকায় এক করোনা আক্রান্তের খোঁজ মেলে। নিরাপত্তার কথা ভেবে ১৪ দিনের জন্য কিচেন বন্ধ থাকে। প্রথম দিকে ৪০০ গ্রামবাসী এবং বিহার সীমান্তে আটকে থাকা ৩০০ জন পরিযায়ী শ্রমিকের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু হয়। ক্রমশঃ সংখ্যাটি ২৫০০ জনে এসে দাঁড়ায়। সোনাপিন্ডি চা বাগানে তৈরী করা খাবার পৌঁছনো শুরু হয়। এসএফআই খড়িবাড়ি লোকাল কমিটির উদ্যোগে বিভিন্ন গ্রাম স্যানিটাইজার করা হয়।
আঠারোখাই, শিবমন্দির অঞ্চলে লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই এসএফআই এবং ডিওয়াইএফই কর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়েন কাজে। নিরন্ন মানুষের কাছে চাল, ডাল পৌঁছে দেন। পরবর্তীকালে সেখানে বামফ্রন্টের গণ সংগঠনগুলির উদ্যোগে ‘জনতার রান্নাঘর’ নাম দিয়ে একটি কমিউনিটি কিচেন শুরু করা হয়। ৩২ দিন ধরে চলে এই কিচেন। এরই মাঝে আঠারোখাইতে সর্বপ্রথম আয়োজন করা হয় বিনামূল্যে জনগণের বাজার। পাড়ায় পাড়ায় বিনামূল্যে শাক সবজি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী তুলে দেওয়া হতো সাধারণ মানুষের মধ্যে।
কমিউনিটি কিচেন শেষ হওয়ার পরবর্তী সময় এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআইয়ের উদ্যোগে বেশ কিছু দিন ধরে গোটা আঠারোখাই অঞ্চল স্যানিটাইজেশন প্রক্রিয়া চলে। সুশ্রতনগর, (মেডিক্যাল এলাকা) এই দুই সংগঠনের সুশ্রতনগর লোকাল কমিটির উদ্যোগে নানা ধরনের শুকনো খাওয়ার মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ২১দিন ধরে চালানো হয় কমিউনিটি কিচেন। করোনা-পরিস্থিতিতে ৩৫ জন গর্ভবতী মহিলাকে পুষ্টিকর খাদ্য দেওয়া হয়। ওই এলাকায় করোনা আক্রান্তের হদিস পাওয়া গেলে ৪ দিন ধরে সংলগ্ন এলাকায় স্যানিটাইজেশন প্রক্রিয়া চলে।
বাগডোগরা ও গোসাইপুর নতুনবস্তি, বাউনিভিটা, অশোকনগর, আলোকঝাড়ি, তারাবাড়ি, রূপসিংজোতের মতো আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা এলাকায় খাদ্য সামগ্রী বিলি করা হয়। ডিওয়াইএফআইয়ের পক্ষ থেকে কিছু এলাকা চিহ্নিত করে সীমাবদ্ধ ক্ষমতা দিয়েই মানুষের পাশে দাঁড়ানো হয়। ৬ এপ্রিল ফয়রানি জোত এলাকার ৭০ টি গরিব পরিবারের মানুষকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ দিয়ে কর্মযজ্ঞের সূচনা। এর কিছু দিন পর পরই সিপিআইএম’র তরফে ‘গরিবের রান্নাঘর’ নাম দিয়ে রান্না করা খাবার বিভিন্ন এলাকাতে বিতরণ শুরু হয়। এএসবের মাঝেই গোঁসাইপুরে সাধারণ মানুষের জন্য বিনামূল্যে একটি বাজারের আয়োজন করা হয়। ‘গরিবের রান্নাঘর’ কর্মসূচী শেষ হলেও ডিওয়াইএফআই জারি রেখেছে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা। তারই প্রতিফলন ঘটছে কোথাও মাস্ক বিতরণ করে তো কোথাও আবার স্যানিটেশনের মধ্যে দিয়ে।
Author Profile

Latest entries
EXCLUSIVE NEWS3 weeks agoপদ্ম-দুর্গে ঘাসফুলের শিকড় মজবুত করতে যাচ্ছেন অভিষেক, গঙ্গারামপুর স্টেডিয়ামে চলছে শেষ লগ্নের প্রস্তুতি!
EXCLUSIVE NEWS3 months agoপুজোয় বয়স্করা কীভাবে আটকাবেন মারণ-রোগকে? শ্রীরামপুর আইএমএ দিল তারই হদিশ!
EXCLUSIVE NEWS3 months agoদলীয় পতাকার বাইরে ভাবতে শিখল আরামবাগ, সাধারণ পড়ুয়াদের ধর্ষণ বিরোধী স্লোগান আছড়ে পড়ল রাজপথে!
EXCLUSIVE NEWS4 months ago‘একুশে বামফ্রন্ট’! নিছক ফেসবুক গ্রুপ নয়, এ যেন ফ্যাসিস্ট মানসিকতার বিরুদ্ধে যৌথতার ব্যারিকেড!