ভাবছেন আপনি নিরাপদ? কাল সকালে উঠে যদি আপনি শোনেন যে আপনি ভারতীয় বাসিন্দা নন? যদি শোনেন এখানেই ভিসা দিয়ে আপনাকে থাকতে হবে? ভাবুন দেখি কি অবস্থা হবে! হ্যাঁ এরকমই অবস্থা আমাদের আসামের বাঙালি হিন্দুদের। এবার আসুন আলাপ করাই চিত্ত পালের সঙ্গে। ইনি সারা আসাম বাঙালি ছাত্র যুব সংগঠনের উপদেষ্টা। গত ২৮ বছর ধরে আসামে বাঙালিদের স্বার্থে লড়ে চলা এক নিঃস্বার্থ মানুষ। তার কাছেই জানা গেল, এই সংগঠনের বর্তমান সভাপতি দীপক দে। এই সংগঠন কোন রাজনৈতিক নামের সঙ্গে যুক্ত নয়। গোটা আসামের বাঙালিদের ভালো মন্দ দেখাই এর কাজ। এটি মূলতঃ একটি যুব ছাত্র সংগঠন যারা কোন ভাবেই কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে না। তাই আমার কোন রাজনৈতিক কেরিয়ার নেই। চলুন, শুনে নিই তার মুখ থেকে আসামের বাঙালীদের বর্তমান অবস্থা ঠিক কী?
আপনার থেকে জানতে চাইবো এনআরসি’র ফলে বাঙালি সহ ৪০ লক্ষ মানুষের মাথার উপর থেকে ছাদ চলে গেছে। এখন ওখানে বাঙালিদের অবস্থা কেমন? বাঙালী ছাড়াও আরো অনেকেই এনআরসি’র আওতায় রয়েছেন তাদের ব্যাপারেও বলুন।
২০১৪ সালের ২৬ ফ্রেবুয়ারী প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী বরাকের শিলচরে রামনগরে এসে বলেছিলেন উনি ক্ষমতায় এলে ডিটেনশন ক্যাম্প ভেঙে গুড়িঁয়ে দেবেন এবং নাগরিকত্ব দেবেন। বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহেরও একই বক্তব্য ছিল। একাত্তরের পর হয়তো দশ হাজার হিন্দু বাঙালী এসেছেন। ওনারা প্রত্যেককে নাগরিকত্ব দেবেন। আবার অসমীয়াদের বলেছেন তারা অসম চুক্তির ৬ নং আইনের ক ধারা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। কিন্তু এই দুই বিপরীত ধর্মী আইনের বাস্তব রূপায়ণ অসম্ভব। তাই ২০১৬-তে একটি আইন পাস হয় যাতে বলা হয় দীর্ঘমেয়াদি ভিসা দেওয়া হবে যেটাও প্রায় সম্ভব নয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেপিসি গঠন করা হবে। তাতে আসামের জাতীয়তাবাদী কিছু মানুষ এর প্রতিবাদ করেন। যার ফলে এক অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আলফা জঙ্গীগোষ্ঠী দুর্গাপুজোর আগেই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। ১ নভেম্বর ধলায় পাঁচ বাঙালিকে গণহত্যা করা হয়। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দবাবু এখনো কাউকে ধরতে পারেননি। এই এক সপ্তাহ আগে ডিমিউয়ে দু’জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। যদিও এটায় আলফা দায় স্বীকার করেছে। এভাবেই প্রচুর আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
আপনারা মুসলিম বাঙালিদের কথা একবারও বললেন না কেন? তাদের জন্য আপনারা কি ভাবছেন?
দেখুন, ১৯৫১-তে যে আদমসুমারী হয় সেখানে বরাক উপত্যকাবাসীরা নিজেকে বাঙালি হিসাবে পরিচয় দিলেও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাবাসী মুসলিমরা নিজেকে অসমীয়া ভাষী বলেি পরিচয় দিয়েছেন। তাছাড়া ওদের নিজস্ব সংগঠন আছে। অথচ হিন্দু বাঙালিদের কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও তারা অসহায়। এই কারণে প্রায় ৩৭ জন আত্মহত্যা করেছেন। এদের মধ্যে ২৫ জন হিন্দু বাঙালী। এরা আজ জমি-বাড়ি হারিয়ে পথে। এদের কে ডিটেনশান ক্যাম্পে পাঠানো হচ্ছে যা জেলের থেকেও ভয়ঙ্কর। তাই এই হিন্দু বাঙালীদের নিয়েই আমরা লড়াই করছি।
কর্ণাটকেও প্রায় ১৩ হাজার বাঙালির একই রকম সমস্যা তৈরি হয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার কি মতামত?
দেখুন ওখানকার এক বিজেপি সাংসদ ওই দাবী তুলেছেন। কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ত্রিপুরাতেও এনআরসি’র চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু তা হলে ত্রিপুরার ক্ষেত্রে ১৯৪৮ সালে এই বাঙালীদের কোন কাগজপত্র থাকা সম্ভব না। এতে প্রায় ১৫ লাখ বাঙালি বিপদগ্রস্ত হবে।আন্দামানেও বাঙালিদের সাথে একই রকম হয়েছে। এইভাবে বিজেপি বিভিন্নভাবে বাঙালিদের সাথে সর্বত্র প্রত্যক্ষভাবে বিরোধিতা শুরু করেছে। তাদের রাষ্ট্রহীন করার দাবী জানাচ্ছে।আসামের প্রায় ২৫ লাখ বাঙালীর আজ বিপদ।
অসম যদি অসমীয়াদের হয়, বিহার যদি বিহারীদের জন্য হয়, মহারাষ্ট্র যদি শুধুই মারাঠাদের হয়, ভারত তবে কার হবে?
মহাত্মা গান্ধী এই কথাটাই বলেছিলেন। ১৯১৭ সালে আশুতোষ মুখোপ্যাধায় এই ভাষাভিত্তিক রাজ্যগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন। তারই পরামর্শে ১৯৪৮ সালে গুয়াহাটী বিশ্ববিদ্যালয় তৈরী হয়। কিন্তু বিজেপি এই ঐক্য ভাঙার চেষ্টা করছে। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের তৈরী এই ভারতবর্ষকে তারা ভেঙে টুকরো টুকরো করতে চাইছেন।
Author Profile

Latest entries
EXCLUSIVE NEWS2020.10.20মানুষের থেকেও বেশি বিশ্বাসযোগ্য ওরা! ২৫টি কুকুর এবং ৯টি বেড়াল নিয়ে ভরা সংসার যুবতীর!
EXCLUSIVE NEWS2020.06.09ফুটবল স্টেডিয়ামে ৫ মিটারের সামাজিক দূরত্ব মেনেই হল চাকরির পরীক্ষা
EXCLUSIVE NEWS2020.05.25ঈদে চূড়ান্ত সম্প্রীতির নজির ফেসবুক পোস্টে, শুভেচ্ছা বার্তায় আপ্লুত নেট-দুনিয়া
EXCLUSIVE NEWS2020.04.19লকডাউনেও রেশন ডিলারের চুরি, পুলিশের সক্রিয় ভূমিকায় ধরা পড়লো অভিযুক্ত!