এখনকার দিনে একটি সফল ব্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে গেলে কি প্রতিভা আর টিমওয়ার্কটাই কি যথেষ্ট?
প্রতিভা আর টিমওয়ার্ক নিশ্চয়ই প্রচণ্ড প্রয়োজন। কিন্তু যদি বলো ‘যথেষ্ট’, তাহলে বলবো ‘যথেষ্ট’ নয়। কারণ এই সময়টা শুধু প্রতিভার সময় নয়। এই সময়ে দাঁড়িয়ে ‘মিডিয়া’ এবং ‘মার্কেটিং’, এই দুটি শব্দ যে কোনও শিল্পের প্রকাশের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। শুধু কি এই সময়? রবীন্দ্রনাথ কি পৃথিবী ট্যুর করে বেড়ান নি? অনার লেখা, ভাবনা, দর্শনের সঙ্গে লোকজনের পরিচয় করান নি? এখন হয়তো শারীরিক ভাবে সাড়া পৃথিবী ট্যুর করতে হয় না। কিন্তু ইন্টারনেটের মাধ্যমে সাড়া পৃথিবী ট্যুর করাটা একান্ত প্রয়োজন। আমি যে প্রোডাক্ট বানালাম সেটা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। কারণ প্রোডাক্ট তৈরি হচ্ছে রাশি রাশি। যদি ব্যান্ডের কথা বলো, তাহলেও পাড়ায় পাড়ায় না হলেও, দুটি পাড়া অন্তর একটি করে ব্যান্ড রয়েছে। তারা প্রত্যেকেই সিঙ্গলস রেকর্ড করছে এবং ইন্টারনেটে ছাড়ছে। কাজেই অসংখ্য প্রোডাক্টের ভিড়ে নিজের প্রোডাক্টটিকে চিহ্নিত করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী মিডিয়া সাপোর্ট এবং মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি দরকার। শুধু প্রতিভা দিয়ে হবে না।
সঙ্গীত আর দর্শন, কতোটা পরস্পরের হাত ধরাধরি করে চলে?
রবীন্দ্রনাথেই ফিরে যাই। ওনার দর্শন, ওনার সঙ্গীতের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আমিও তীব্রভাবে বিশ্বাস করি, যথন একটি গান লিখছি বা সুর করছি, তার মধ্য দিয়ে আমার জীবনবোধ, জীবন-অভিজ্ঞতা প্রতিফলিত হয়। সেটা আমার নিজের প্রেম, বিরহও হতে পারে! আবার সেই প্রেম-বিরহ থেকে নিঙড়ে নেওয়া জীবনবোধ সেটাও হতে পারে। সেটা প্রকাশিত হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। নইলে আমি এতো গান লিখবো কেন? হতে পারে কোনও প্রোজেক্টের জন্য আমি গান লিখলাম, আমাকে হয়তো ফুটবল নিয়ে গান লিখতে বলা হল। সেখানে নিশ্চয়ই আমার জীবনবোধ প্রতিফলিত হবে না। সেখানে শুধু আমার প্রকাশ-ভঙ্গিমাকেই দেখা যাবে। কিন্তু যদি নিজে গান লিখি, তাহলে সেই গানে জীবনবোধ, দর্শন এগুলি সবই প্রকাশিত হওয়ার স্কোপ রয়েছে। সেটা ছাড়া কেন নিজের গান করবো? আমি অন্ততঃ এভাবেই ভাবি।
ভিডিওগ্রাফি – বৃতি সুন্দর রায়
ক্যাকটাসের আগামী কোন কোন কাজ মুক্তির অপেক্ষায় প্রহর গুনছে?
আমরা সদ্য এক রাউন্ড মুক্তি পেয়েছি। আমাদের একটি অ্যালবাম ২০১৮-এর ডিসেম্বরে মুক্তি পেয়েছে। ‘তবুও ঠিক আছে’ নামক এই ডিজিট্যাল অ্যালবামে চারটি গান রয়েছে। তার মধ্যে ‘আমরা আজও নরকে’, ‘তবুও ঠিক আছে’ এক্কেবারে ফ্রেশ গান। ভিডিওর মাধ্যমে আগেই মুক্তি পেয়েছিল ‘জলের ধারে’ এবং ‘নাগরিক বোতাম’ আগেই মুক্তি পেয়েছিল। আমরা কিছু সাফল্যও পেয়েছি। একটি এফএম চ্যানেলের বিচারে ‘জলের ধারে’ গানটি ‘বেস্ট ব্যান্ড সং অফ দ্য ইয়ার’ শিরোপা পেয়েছি। পরবর্তী মুক্তির ক্ষেত্রে আমরা হোমওয়ার্ক করেই এগোবো। আশা করছি, চলতি বছরের শেষ দিকে চারটি গানের ডিজিট্যাল ইপি রিলিজ করবো।
ধরা যাক একটি বাংলা ব্যান্ড, যাদের পরিচিতি তাদের এলাকার বাইরে খুব এক্তা নেই। সেক্ষেত্রে তাদের কাছে নিজেদের টিকিয়ে রাখার অক্সিজেন কী হতে পারে?
ইন্টারনেট, ইন্টারনেট, ইন্টারনেট।
অতিরিক্ত সফটওয়্যার নির্ভরতা কি গানের ক্ষতি করছে?
একদমই না, যারা এটা বলেন তারা একেবারেই বোকার মতো এঁড়ে তর্ক করেন। অথচ তাদের বাড়িতে গেলেই দেখা যাবে তাদের বাড়িতে স্মার্ট টিভি রয়েছে এবং হাতে রয়েছে স্মার্ট ফোন। কাজেই প্রযুক্তি এলে প্রযুক্তিটাকে ব্যাবহার করে নিতে হয়। আমি হোয়াটস অ্যাপ করবো না, হাতে চিঠি লিখবো এটা যদি কেউ সত্যি সত্যি পালন করেন। যাপনে যদি তার এটি থাকে, তাহলে একমাত্র তারই এই কথা বলা মানায়। নয়তো প্রযুক্তিকে আপন করে নেওয়াটাই হল সময়ের ধর্ম।
ভিডিওগ্রাফি – বৃতি সুন্দর রায়
নতুন বাংলা ব্যান্ড যথন পারফর্ম করতে যায়, পেমেন্টের ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যের স্বীকার হন। এটাকে আপনি কী চোখে দেখছেন?
যে কোনও শিল্পধারায় নতুন যে কোনও শিল্পীকে এই অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হতেই হয়। যিনি নতুন ছবি আঁকছেন, তার ছবি যদি ১৫ হাজারে বিক্রি হয় তিনি খুব খুশিই হন। অথচ একজন প্রতিষ্ঠিত পেইন্টারের ছবি আড়াই লাখ টাকায় যথন তখন বিক্রি হয়। তেমনই বাংলা ব্যান্ডের ক্ষেত্রেও ভূমি, ক্যাকটাস, ফসিলস, চন্দ্রবিন্দু এদের পেমেন্টের সঙ্গে একটি নতুন ব্যান্ডের কী করে সাযুজ্য থাকবে?
শিল্পী হিসেবে সমাজের প্রতি ক্যাকটাসের কী দায়বদ্ধতা রয়েছে?
ক্যাকটাস সামাজিক দায়বদ্ধতা বারবার তুলে ধরেছে। রাজনৈতিক আঙ্গিকে আমাদের একাধিক গান রয়েছে। যেটি কোনও দলীয় সমর্থন বা দলীয় বিরূপতা নয়। বরং দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতির বিরুদ্ধে একটি সামগ্রিক বক্তব্য। অথবা যুদ্ধ, ধ্বংস এগুলির বিরুদ্ধে তীব্র চিৎকার। আমরা ২০০৪ সালে ‘বুদ্ধ এসেছেন’ তৈরি করেছিলাম। আমাদের ‘ব্লা ব্লা ব্লা’ ২০১৩-তে মুক্তি পায় এবং সাম্প্রতিক রিলিজ ‘আমরা আজও নরকে’। এই তিনটি গানেই স্পষ্টভাবেই রাজনৈতিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ রয়েছে।
সামাজিক ক্ষেত্রেও একটি বড় বিষয় হলো সমকামীতা বা সমান্তরাল যৌনতা। সেখানেও ক্যাকটাস অনেক আগেই ২০০৫-এ ‘পক্ষীরাজ’ গানটির মাধ্যমে বক্তব্য তুলে ধরেছে। অবশ্যই ব্যাতিক্রমী যৌনতাকে তুলে ধরার চেস্তা এই গান। ‘দণ্ডিত যতো পক্ষীরাজ, এলো আজ ওড়ার সময়’। যাক, অন্ততঃ দেশের ভাবনা-চিন্তার থেকে এগিয়ে ছিল ক্যাকটাস, এটি গর্বের বিষয়। যাই হোক, সেই দেশ বা রাষ্ট্র যাই বলি না কেন, ২০১৮ সালে ৩৭৭ ধারাটি তুলে নেয়। ‘তুমিও বোঝো আমিও বুঝি’ গানটির কথাই ধরা যেতে পারে। ‘বা বা বা বা বাহ রে কী আরাম, বাবর নাকি রাম, ভো ভো ভো ভো ভো ভো ভোটের টিক টিকিটের কী দাম’। এই ধরণের গানেও খুব হালকা ছলেই রাজনৈতিক ভাবনা বা সামাজিক অস্তিত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
কয়েক দশকের সঙ্গীত যাত্রাপথে বহু কিছু অর্জন করেছেন। আর কী পাওয়া বাকি বলে মনে হয়?
ক্যাকটাস আর ‘হলুদ পাখি’ এটা সমার্থক হয়ে গিয়েছে। ক্যাকটাসের অন্য গান জানুক না জানুক ‘হলুদ পাখি’ মানুষ জানে। যারা কিছুটা আমাদের শোনেন তাদের কাছে ‘শুধু তুমি এলে না’, ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’, ‘বুদ্ধ এসেছেন’, ‘আমিও বুঝি তুমিও বোঝো’ এরকম পাঁচ-ছয়টি গানের একটি তালিকা রয়েছে। অত্যন্ত ভাবনা-চিন্তা ও পরিশ্রম করে বাকি গানগুলি সাজাই, সেগুলির স্বীকৃতি পাওয়া বাকি রয়েছে মনে হয়। যেমন ‘ব্লা ব্লা ব্লা’ অ্যালবামের মজাদার একটি গান ‘আমি ছুটছি, আমি ছুটছি এটাই স্ট্যাটাস আপডেট’। এই গানগুলির মধ্যেও আমাদের একই ভালোবাসা, একই যত্ন রয়েছে। তাই ক্যাকটাসকে জানতে হলে এগুলিও মনে দিয়ে শোনা উচিৎ। ‘লাশকাটা ঘরে ময়না তদন্ত, আমার মৃতদেহে তোমাদের ষড়যন্ত্র’ এই গানেও যে প্রচণ্ড স্টেটমেন্ট রয়েছে সেগুলোও আশা রাখি সমান জনপ্রিয়তায় পৌঁছবে।
ভিডিওগ্রাফি – বৃতি সুন্দর রায়
Author Profile

Latest entries
EXCLUSIVE NEWS2020.10.20মানুষের থেকেও বেশি বিশ্বাসযোগ্য ওরা! ২৫টি কুকুর এবং ৯টি বেড়াল নিয়ে ভরা সংসার যুবতীর!
EXCLUSIVE NEWS2020.06.09ফুটবল স্টেডিয়ামে ৫ মিটারের সামাজিক দূরত্ব মেনেই হল চাকরির পরীক্ষা
EXCLUSIVE NEWS2020.05.25ঈদে চূড়ান্ত সম্প্রীতির নজির ফেসবুক পোস্টে, শুভেচ্ছা বার্তায় আপ্লুত নেট-দুনিয়া
EXCLUSIVE NEWS2020.04.19লকডাউনেও রেশন ডিলারের চুরি, পুলিশের সক্রিয় ভূমিকায় ধরা পড়লো অভিযুক্ত!