প্রতিবেদক – পল মৈত্র
হিমেল হাওয়া ও হালকা কুয়াশায় উত্তরবঙ্গে শীতের আমেজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। শুরু হয়ে গিয়েছে শীতের মধু, খেজুর রস আহরণ। এই রস আহরণে উত্তরবঙ্গের গাছিরা নেমে পড়েছেন প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। খেজুর রস আহরণ করে খেজুর গুড় বানানো আবহমান কাল ধরেই বাংলার একটি মরসুমী ঐতিহ্য। আর খেজুর রসের পিঠে, পায়েসের মহিমা জানে আট থেকে আশি সকলেই। তাই বছরজুড়ে অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকলেও শীতকালে চাষিদের কাছে খেজুর গাছের কদরই আলাদা। কারণ এ গাছ থেকেই আহরিত হয় সুমিষ্ট রস। এ রস জ্বালিয়ে ঝোলা, দানা ও পাটালি গুড় তৈরি করা হয়। খেজুরের গুড় থেকে এক সময় বাদামি চিনিও তৈরি করা হতো।যার স্বাদ ও ঘ্রাণ ছিল সর্ম্পূণ ভিন্ন। খেজুর গাছের বৈশিষ্ট্য হল যতো বেশি শীত পড়বে, ততো বেশি মিষ্টি রস দেবে।
দক্ষিন দিনাজপুর জেলার বাউল এলাকার গাছি মিন্টু বসাক জানান, গাছের ডগা চেছে বাঁশের খিল লাগানোর কাজ শেষ। রস আহরণ শুরু হওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা। তিনি আরও বলেন, নির্বিচারে খেজুর গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে, যা পল্লী বাংলার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। খেজুর গাছ থেকে শুধু সুমিষ্ট রস ও গুড়ই হচ্ছে না, প্রকৃতির ভারসাম্য সুরক্ষায় খেজুর গাছের আবাদ সম্প্রসারণ জরুরি। বস্তুতঃ দিন বদলের সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রায় অনেক কিছু বদলে গেলেও বদলায়নি খেজুরের রস সংগ্রহ এবং গুড়-পাটালি তৈরির পদ্ধতি। তাই শীতের আগমনী বার্তা জানান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এখানকার ‘গাছিরা’ প্রস্তুতি নেন খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের। প্রথমেই খেজুর গাছ কেটে পরিষ্কার করেন তারা। এরপর শুরু হয় রস সংগ্রহ। চিরাচরিত পদ্ধতিতেই মাটির ভাঁড়ে (কলসি) রাতভর রস সংগ্রহ করা হয়। সূর্য ওঠার আগেই তা আবার গাছ থেকে নামিয়ে আনা হয়। পরে এই রস মাটির হাঁড়িতে কিংবা টিনের তৈরি কড়াইয়ে জ্বালিয়ে বানানো হয় গুড়-পাটালি।
দক্ষিন দিনাজপুরের বুনিয়াদপুর ও গঙ্গারামপুরের যথাক্রমে বড়াইল, শেরপুর, শিববাড়ি ও সর্বমঙ্গলা গ্রামের গাছিরা জানালেন কিছু তথ্য। কার্তিক মাসের শুরু থেকেই খেজুর গাছের পরিচর্যা চলছে। গাছের বাইগা (ডাল) ঝোড়া, গাছের মাথা ছেনি অথবা ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে কয়েক দফা চাঁচ দেওয়ার কাজ চলছে। উত্তরবঙ্গের আরেক গাছি নীরদ সরকার বলেন, এই গ্রামের খেজুর রস ও পাটালির সুনাম রয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় এখানকার গুড় বিক্রি হয়। জেলার গ্রামীণ মেঠো পথের ধারেই রয়েছে সারি সারি খেজুর গাছ। আসন্ন পিঠেপুলির মরসুমে এই খেজুর গুড় ও রস নতুন মাত্রা আনবে বাংলার গৃহস্থের হেঁশেলে।
Author Profile

Latest entries
জগতের বাহার4 days agoবাংলার প্রাচীনতম মসজিদের গায়ে আজও লেগে সংস্কৃত লিপি!
EXCLUSIVE NEWS6 days agoকথা না বলতে পারা ছেলেটির খোঁজ মিলেছে, শেয়ার করে বাড়ির লোককে জানান
মরসুমী ফুল1 week agoপৌষ-পার্বণে পিঠেপুলির জন্য মাটির সরা বানাতে ব্যস্ত বাংলার মৃৎশিল্পীরা
EXCLUSIVE NEWS1 week agoজন্মেছে কন্যা সন্তান, তাই ছাদ থেকে ফেলে খুন করা হল দুধের শিশুকে!