ঐতিহ্য এবং ইতিহাসের মোড়কে মাহেশের রথযাত্রা বাংলার সর্বাধিক বিখ্যাত এবং বৃহত্তম। পুরীর রথের পরেই সারা দেশে এই রথযাত্রার প্রসিদ্ধি। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘রাধারাণী’ উপন্যাসেও এই রথের উল্লেখ রয়েছে। ছয় শতাব্দী-প্রাচীন মাহেশের রথযাত্রার ইতিহাস জানতে সটান চলে গেলাম শ্রীরামপুরের মাহেশে জগন্নাথ মন্দিরে। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত পঞ্চানন চট্টোপাধ্যায় তাঁর কথায় তুলে ধরলেন ইতিহাসের মুহূর্তগুলো। ধ্রুবানন্দ নামে এক সাধক জগন্নাথের সেবা-পূজো করার ইচ্ছে নিয়ে পুরী যান। সেখানে মহারাজাকে গিয়ে তাঁর বাসনার কথা বললেন ধ্রুবানন্দ। রাজা বললেন, মন্দিরের মূল পুরোহিতের অনুমতি এক্ষেত্রে আবশ্যক। তখন ধ্রুবানন্দ পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মূল পুরোহিতকে সব কথা খুলে বলেন। তবে পুরোহিত তাঁকে সেবা-পূজা করার অনুমতি দিলেন না। দুঃখে এবং হতাশায় ধ্রুবানন্দ প্রাণত্যাগ করতে উদ্যত হলেন।
সেই সময় জগন্নাথ তাঁকে স্বপ্নে মাহেশ ফিরে গিয়ে গঙ্গাতীরে অপেক্ষা করতে বললেন। তিনি মাহেশ ফিরে তো এলেন, কিন্তু এদিকে প্রভুর তো কোনও দেখাই মেলে না। তিনি ফের অনশনে বসলেন। এরপর এক বর্ষণমুখর রাতে গঙ্গাবক্ষে ভেসে এলো তিনটি নিমকাঠের খণ্ড। সেই দিয়েই বানানো হল জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার মূর্তি। এদিকে ধ্রুবানন্দের বয়েসও যথেষ্ট হল। কার হাতে প্রভুর দায়িত্ব দিয়ে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন বুঝতে পারছিলেন না। এরই মধ্যে একদিন তিনি দেখলেন, গঙ্গায় চৈতন্যদেব তাঁর দ্বাদশ গোপাল নিয়ে বজরায় যাচ্ছেন। কাঁসর-ঘণ্টার আরতি শুনে তিনি মন্দিরের দিকে এলেন। সেই দেখে ধ্রুবানন্দ মনে মনে নিশ্চিন্ত হয়ে দেহত্যাগ করলেন। চৈতন্যদেবের দ্বাদশ গোপালের পঞ্চম গোপাল ছিলেন কমলাকর পিপলাই। চৈতন্যদেবের নির্দেশে তিনিই এই জগন্নাথ মন্দির তৈরির ব্যাবস্থা করেন। শ্যামবাজারের নয়নচাঁদ মল্লিক ধর্মপাল মূল মন্দিরটি তৈরি করে দেন। ৬২২ বছর ধরে সেই নিমকাঠের মূর্তিরই পুজো হয়ে আসছে মাহেশে। পুরোহিত মশাই আরও জানালেন, একপাকেই জগন্নাথের ভোগ রান্না হয় এবং কোনও তেল-মশলা চলে না। সেদ্ধ গঙ্গাজলে সৈন্ধব লবণের ভোগ রান্না হয়ে থাকে।
এছাড়া এই রথযাত্রার কারণ হিসেবে আরও একটি জনশ্রুতি রয়েছে। জগন্নাথ দেব যে মাসীর বাড়ি যান, সেই মাসী তাঁর রক্ত সম্পর্কের কেউ নন। তিনি হলেন এক সাধারণ ভক্ত যিনি আশা করেছিলেন যে প্রভু একদিন তাঁর বাড়িতে এসে পায়ের ধুলো দেবেন। তাই জগন্নাথ দেব তাঁর ভক্তের মনস্কামনা পূর্ণ করতেই প্রতি বছর যান ভক্তের বাড়িতে। মন্দিরে জগন্নাথকে পুরোহিত ছাড়া কেউ ছুঁতে পারেন না। তাই সব বর্ণের মানুষ যাতে প্রভুকে ছুঁতে পারেন সেই জন্যই জগন্নাথ প্রতি বছর রাস্তায় নেমে আসেন।
Author Profile

Latest entries
EXCLUSIVE NEWS2020.10.20মানুষের থেকেও বেশি বিশ্বাসযোগ্য ওরা! ২৫টি কুকুর এবং ৯টি বেড়াল নিয়ে ভরা সংসার যুবতীর!
EXCLUSIVE NEWS2020.06.09ফুটবল স্টেডিয়ামে ৫ মিটারের সামাজিক দূরত্ব মেনেই হল চাকরির পরীক্ষা
EXCLUSIVE NEWS2020.05.25ঈদে চূড়ান্ত সম্প্রীতির নজির ফেসবুক পোস্টে, শুভেচ্ছা বার্তায় আপ্লুত নেট-দুনিয়া
EXCLUSIVE NEWS2020.04.19লকডাউনেও রেশন ডিলারের চুরি, পুলিশের সক্রিয় ভূমিকায় ধরা পড়লো অভিযুক্ত!