চেন্নাই, নাম টা শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে এক সুদূর প্রসারী বালুকা বেলা, আর ওপার থেকে উকিঁ দিচ্ছে দিগন্ত বিস্তৃত শ্বেত-নীলাভ তরঙ্গ রাশি, মেরিনা বিচ। কিংবা ওই মহাসিন্ধু পাড়ের একটা মাঠ, যা একসময় গমগম করত “দাদা”র নামে, চিপক। আর ধোসা, ইডলি, সাথে একটু চাটনি আর সাম্বার ডাল…..
কিন্তু এটাই কি চেন্নাই? আর কিছুই কি নেই? আচ্ছা যদি বলি হাওড়া আর চেন্নাই দুই বোন, হ্যাঁ আদতেই এই দুই রেলস্টেশন দুই বোন, সব কিছুই একরকম, শুধু স্টেশন চত্বরে একটু ইল্লে, তান্নি, আন্না শুনে পাওয়া যায়, এই যা। শুধু কি মেরিনা বিচ? এলিয়ট’স বিচ কি দোষ করল? না হয় দাদা নয়, কিন্তু নেহেরু স্টেডিয়াম যে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানে এখনও গমগম করে। ধোসা মানে মশালা ধোসা এখানে খুব করে খুঁজতে হবে, প্লেন, পেপার, ওনিয়ন, রাভা, এমনকি ডিম ধোসার চাপে মশালা ধোসা অনেকটাই ব্যাকফুটে। তবে শুধু ইডলি ধোসাই নয় মৎস্য মারিয়া সুখে খাইতে পারেন, তবে রেস্টুরেন্টে টক বড় বালাই, আর ১৮ রকম মশলা সমন্বিত চিকেন চেট্টিনাড তো অবশ্যই খেয়ে দেখতে হবে।
মাদুরাই শহর কে দক্ষিণের কাশী বললেও খোদ চেন্নাই শহরে মন্দিরে আধিক্যও কম নয়। এখানকার অলিতে গলিতেও লুকিয়ে আছে প্রচুর মন্দির। এখানেই শেষ নাকি? আর কিছু নেই এ শহরে? আরে একটু ধৈর্য্য ধরুন, সবে তো শুরু, করমন্ডল উপকূলে মাত্র দুটো সি বিচ? মেরিনা বিচের ঠিক পাশেই আছে সবুজ সমুদ্রতট-পালাভক্কম বিচ, আর একটু দূরে গেলেই দেখা মিলবে এক কৃত্রিম বালুকাবেলার-গোল্ডেন বিচ। উড়িষ্যার নন্দন কানন, মনে পড়ে সাদা বাঘ, তবে চলুন যাওয়া যাক আড়িনগর আন্না জুওলজিকাল পার্ক। সাপ ভালো লাগে? তা হলে তো গিন্ডি ন্যাশানাল পার্ক যেতেই হয়, খাঁচায় বন্দি প্রচুর সাপ আছে এখানে, আডিয়ার পুঙ্গা রিভার রেস্টোরেশান পার্ক সত্যিই আপনাকে নিয়ে যেতে পারে কোনো প্রাচীন সভ্যতার কল্পনায়। কলকাতার সায়েন্স সিটি যাওয়া হয়নি? এদিকে চেন্নাই এসে পড়েছেন? বেশ তো একবার ঢুঁ মেরে আসুন তামিলনাড়ু সায়েন্স সিটি থেকে। সরকারি মিউজিয়াম, না হে এটা কলকাতার মিউজিয়ামের কাছে নেহাতই নস্যি, তবে হ্যাঁ চেন্নাই শহর আর এর ইতিহাস সত্যিই খুব ভালো ভাবে বলে এই মিউজিয়াম। এর পর চলুন একটু পুণ্য করে আসা যাক কল্পেশ্বর মন্দির, শ্রী পার্থ সারথি মন্দির, পাহাড় চূড়ায় সেন্ট থমাস মাউন্ট চার্চ, মাদ্রাস কালী বাড়ি থেকে। রয়েছে বিবেকানন্দ হাউস, রামকৃষ্ণ মন্দির, তবে এই দুটো জায়গায় সারাক্ষণই তামিলিয়ান কম আর বাঙালি বেশী দেখা যায়। মাদ্রাস ক্রোকোডাইল ব্যাঙ্ক দেখতে যেতেই পারেন, তবে ভুল করেও এদের কান্নাকাটি দেখে এদের চোখ মোছা তে গেলে আপনার সমূহ বিপদ। চেন্নাই এলে অবশ্যই একবার চড়তে হবে মাত্র চার কামরা যুক্ত মেট্রো রেল।
চেন্নাই, শহরটি এখন আবার বিখ্যাত চিকিৎসার জন্য, শুধু দেশ নয় , এমনকি বিদেশ থেকেও মানুষ আসে এখানে চিকিৎসার জন্য, অ্যাপোলো, নাম টাই যার যথেষ্ট কারণ।
পরিশেষে, না, এখানে শুধু টক খাবার ই নয়, গ্রীষ্ম কাল ও চিরস্থায়ী বটে, তবু তাও, মেরিনা বিচ হোক বা এলিয়ট’স সূর্যদোয়ের একটা আলাদা মাত্রা এনে দেয়। চিপক হোক বা নেহেরু, কখনো না কখনো ভারতের নামেই জয়ধ্বনি দেয়, আর সাগর পাড়ে প্রিয় মানুষটির হাতে হাত রেখে ঢেউ গুনতে গুনতে আচমকাই ভেসে ওঠে পারের মা ঠাকুমার কোলে মাথা রেখে শোনা সাত সমুদ্র আর তেরো নদীর পাড়ের রূপকথার কোনো এক দেশের গল্প।