ওনার নাম সতীশ দাস। ছয়ের দশকে স্বপ্নের শহর বোম্বের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছিলেন বাংলার এই ব্যায়ামবীর। ১৯৬১ সালে তিনি মিস্টার বোম্বের শিরোপা জিতে নেন। সেই অশীতিপর সতীশ দাস এখন বিস্মৃতির অতলে।জন্মস্থান শ্রীরামপুরেই তাঁর দিন কাটছে চরম অবহেলায়। কিন্তু জীবনের এতো ঘাত-প্রতিঘাতেও ভোলেন নি ফেলে আসা সেই সোনালী দিনগুলোর কথা। ঘরের পাশেই এরকম এক বিরল প্রতিভার সন্ধান পেয়ে বাহির শ্রীরামপুরে তাঁর বাড়িতে হাজির হয়েছিল এক্সক্লুসিভ অধিরথ।
শরীরচর্চার বিষয়টি কী করে আপনার মাথায় এল?
নারান কর্মকার নামে আমার এক বাল্যবন্ধু তাঁর বাড়ির রান্নাঘরে নিয়ে গিয়ে ব্যায়াম শেখানো শুরু করে। তারপর সুনীল ভট্টাচার্য নামে একজনের সঙ্গে আলাপ হয়। তিনিও আমার শারীরিক গঠনের প্রশংসা করে এগিয়ে চলার পরামর্শ দেন। এভাবেই আমার জেদ চেপে যায়। ভাবি শুভাকাঙ্খীরা যখন বলছেনই, তখন চেষ্টা করে দেখাই যাক।
সেই সময় আপনার খাদ্যাভ্যাস কী ছিল?
আমাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ ছিল। বাবা মারা যাওয়ার পর মাত্র ১২ বছর বয়েসেই আমাকে সুতোকলে কাজে ঢুকতে হয়েছিল। আমার মা আমাকে আখের গুড় সহ চারটে রুটি দিতেন। বিকেলে সেটা খেয়েই আমি শরীরচর্চা করতাম। ফল খাওয়ারও সামর্থ্য ছিল না। ভাতের ফ্যান আর কিছু ভাত নুন দিয়ে মেখে খেয়ে কাটিয়েছি বছরের পর বছর। কিন্তু তারপর বুঝলাম এভাবে চলবে না। আমাকে ব্যায়ামবীর হতে হবে। তাই বোম্বে পাড়ি দিলাম। তবে বোম্বে যাওয়ার আগেই দেহসৌষ্ঠব প্রতিযোগিতায় হুগলী সেরা হয়েছিলাম। মিস্টার বেঙ্গল প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করি।
বোম্বেতে যাওয়ার পর আপনার প্রাথমিক কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল?
বোম্বে পাড়ি দিলাম কিন্তু কোনও লাভের লাভ হল না। কোনও চাকরি জোগাড় করতে পারলাম না, তাছাড়া সেখানে কেউ আমাকে চেনেও না। এই সময় ঘটনাক্রমে শ্রীরামপুরেরই এক বাসিন্দা চারু সেনের সঙ্গে আলাপ হয়। প্রাথমিক আশ্রয় তিনিই আমাকে দিলেন। এভাবে কিছুদিন কাটার পরেই ফের চাকরির সন্ধান শুরু করলাম। বহু জায়গায় ঘোরার পর মাহিন্দ্রাতে আমার চাকরি হল। ১২৭ টাকা মাইনে ছিল।
এই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে কী করে মিস্টার বোম্বে হলেন?
অফিসের চার বন্ধু মিলে গণেশ পুজোয় ঠাকুর দেখতে বেড়িয়েছিলাম। হঠাৎ এক জায়গায় কানে এল মিস্টার বোম্বে প্রতিযোগিতা শুরু হচ্ছে। সেই দিন আমার ভূমিকা শুধু দর্শক হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকলেও স্বপ্নের জারণ শুরু হয়ে গিয়েছিল। অবশেষে বোম্বে স্টেশনের কাছে একটি ক্লাবে অনুশীলন শুরু করি। কিন্তু পরিকাঠামো পছন্দ না হওয়ায় আমি ‘ন্যাশনাল হেলথ লিগ কালচার’ ক্লাবে যোগ দিলাম। এরপর মিস্টার বোম্বে প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হলাম। বিচারক মণ্ডলীর এক সদস্য বাঙালি ছিলেন। তাঁর থেকে আমার সামান্য খুঁত টুকু জেনে নিলাম। শুরু হয়ে গেল পরের বছরের প্রস্তুতি। ১৯৬১ তে প্রচুর পরিশ্রম এবং চাকরির জমানো টাকায় ভালো খাবার খেয়ে সুবিশাল চেহারা বানাতে সফল হলাম। শেষ পর্যন্ত ৪১ জন প্রতিযোগীর মধ্যে থেকে ছিনিয়ে নিলাম সেরার শিরোপা।
মিস্টার বোম্বে হওয়ার পর আর কোথায় আপনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন?
মিস্টার বোম্বে হওয়ার পর আমি মিস্টার ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য নির্বাচিত হলাম। কেরলে সেই প্রতিযোগিতার আসর বসে। মাত্র ২ পয়েন্টের ব্যাবধানে আমি বাংলার গৌর সরকারের কাছে হেরে গিয়ে চতুর্থ হলাম। শেষ মুহূর্তে আমার পা খুব সামান্য টলে গিয়েছিল। এরপর যদিও ভগ্ন হৃদয়ে পুনেতে সর্বভারতীয় মিস্টার অ্যাপোলো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেও খেতাব জিতলাম। এরপর বাংলায় ফিরে জল বসন্তে আক্রান্ত হয়ে বহু কষ্টে গড়া শরীর ভেঙে পড়ে। সুস্থ হয়ে হিন্দমোটর কারখানায় যোগ দিলাম। শুরু হল এক অন্য জীবন।
বর্তমানে আপনার অবস্থা কী রকম?
এখন আর্থিক কষ্টে ভুগছি। পূর্বতন বাম সরকার বা বর্তমান তৃণমূল সরকারের কাছে আবেদন করেছি। কোনও সাড়া পাই নি। কেউ আমাকে স্বীকৃতিও দেয় নি।
এখনকার দিনে ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা জিমগুলোয় বর্তমান যুবসমাজ ঘাম ঝরাচ্ছে, চলছে আকর্ষণীয় শরীর গঠনের প্রচেষ্টা। এই বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
শরীর দেখানোর জন্য নয়, শরীর ভালোবাসার জন্য। শরীর মানুষের সম্বল, দেখিয়ে বেড়ালে তা থাকে না। শরীরের মধ্যে অহঙ্কার নিয়ে এলে কোনও দিনই সঠিক শরীর গঠন হবে না।
Author Profile

Latest entries
EXCLUSIVE NEWS2020.10.20মানুষের থেকেও বেশি বিশ্বাসযোগ্য ওরা! ২৫টি কুকুর এবং ৯টি বেড়াল নিয়ে ভরা সংসার যুবতীর!
EXCLUSIVE NEWS2020.06.09ফুটবল স্টেডিয়ামে ৫ মিটারের সামাজিক দূরত্ব মেনেই হল চাকরির পরীক্ষা
EXCLUSIVE NEWS2020.05.25ঈদে চূড়ান্ত সম্প্রীতির নজির ফেসবুক পোস্টে, শুভেচ্ছা বার্তায় আপ্লুত নেট-দুনিয়া
EXCLUSIVE NEWS2020.04.19লকডাউনেও রেশন ডিলারের চুরি, পুলিশের সক্রিয় ভূমিকায় ধরা পড়লো অভিযুক্ত!