কাটাকুটি

রিভিউ – BANNED : ফ্যাসীবাদের হাতে খুন হয় মানুষ, খুন হয় না আদর্শ!

নন্দনে সদ্য শেষ হওয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হল রীতম ব্যানার্জী পরিচালিত স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি ‘ব্যানড’। ভিন্ন স্বাদের এই খুদে ছবিটি ইতিমধ্যেই কুড়িয়ে নিয়েছে প্রশংসা।

প্রযোজনা – টিনসেল টাউন প্রোডাকশনের ব্যানারে তৈরি হয়েছে সাহসী ছবিটি। ইতিমধ্যেই ইউটিউবেও মুক্তি পেয়েছে ‘ব্যানড’।

পরিচালনা – এটির পরিচালক হিসেবে রয়েছেন রীতম ব্যানার্জী। শর্ট ফিল্মটি সুচারু বুদ্ধিমত্ত্বা এবং প্রগতিশীল মানসিকতার পরিচয় দিয়ে নির্মাণ করেছেন তিনি। বর্তমান সময়ের প্রাসঙ্গিক একটি বিষয়কে কেন্দ্র করেই জাল বুনেছে ছবির গল্প। অচলায়তনকে চিনতে শেখানো রবীন্দ্র-সাহিত্য এবং গান আগামী দিনে নিষিদ্ধ করলো রাষ্ট্র-ব্যবস্থা। এই দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে শাণিত অস্ত্রের দলিল হয়ে উঠেছে ‘ব্যানড’।

মুখ্য চরিত্র – ছবিতে মুখ্য চরিত্র হিসেবে দেখানো হয়েছে গোরা (শুদ্ধায়ন) এবং সন্দীপকে (সুপ্রতিম)। সন্দীপ এক তরুণ চলচ্চিত্র পরিচালক। তিনি ফ্যাসীবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে তার এই লড়াইয়ে সঙ্গী অভিন্ন হৃদয় বন্ধু গোরা সহকারী চলচ্চিত্র পরিচালক। তাদের সঙ্গে এই কাজে এগিয়ে আসেন সন্দীপ, নিখিলেশ, নন্দিনীর মতো প্রতিবাদী চরিত্ররা। একই পথের পথিক হয় শিশু শিল্পী অমল ও সুধাও।

ছবির ভাবনা – নন্দনে এই ছবিটি দেখার উপচে পড়া ভিড় এবং দর্শকের জায়গা না পাওয়া প্রমাণ করে ছবিটি মানুষকে কতোটা ভাবিয়েছে। ছবির মূল বিষয়বস্তু ফ্যাসীবাদের ভয়াবহতা। যা এতোটাই ভয়ঙ্কর যে জাতির ভাবনার ইষ্টদেবতা কবিগুরুকেও নিষিদ্ধ করতে ছাড়েনি। এমনকি গুলি করে প্রাণে মারা হয় রবীন্দ্র-অনুরাগীদেরও। আমাদের জীবনের প্রতিটি কোণায়, প্রতিটি ক্ষণে, ঘুমে-জাগরণে যিনি মিশে রয়েছেন তাকে মুছে ফেলার অপচেষ্টা সুন্দরভাবেই হাজির হয়েছে ছবিতে।

ছবির সমালোচনা – প্রথমতঃ সঠিক সঙ্গীতের ব্যবহার ছবিতে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। বিশেষ করে ‘ও রবি ঠাকুর হে’ গানটির ব্যবহার একেবারেই যথাযথ। শিল্পীদের অসাধারণ অভিনয় মন ছুঁয়েছে, ঠিক তেমনি ভিএফএক্স সহ উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার মুগ্ধ করেছে। তবে ছবির বাক্য গঠনে আরও খানিক যত্নশীল হওয়া যেত। একটি দৃশ্যে “রবীন্দ্রনাথ তোর বাপ হয় রে”, আরেকটু অন্যভাবেও সাজানো যেত।

সেরা মুহূর্তঃ-  জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে আগুন ধরানোর দৃশ্য কিংবা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা ঝোলার মতো দৃশ্য প্রায় অর্ধমৃত বাঙালি সত্ত্বাকে ঘা মেরে আরও একবার জাগিয়ে তুলতে সক্ষম।

সব শেষে বলা যায়, ফ্যাসীবাদের হাত থেকে জাতিকে বাঁচাতে যুদ্ধের কাণ্ডারি সেই রবীন্দ্রনাথই। সংস্কৃতি বাঁচানোর চিত্রনাট্য আঁকা এই ছবি ইতিমধ্যেই জিতে নিয়েছে অগুনতি দর্শকের ভালোবাসা। তাই চোখ বন্ধ করেও এই ছবিকে ১০-এর মধ্যে ৯ দেওয়াই যায়। নিঃসন্দেহে চিত্র পরিচালক রীতম ব্যানার্জী আগামী দিনের এক সম্ভাবনাময় পরিচালক হয়ে ওঠার পথ প্রশস্ত করলেন। আগামী দিনে আমরা তার থেকে আরও ভাবনাশীল কাজ দেখার আশায় থাকলাম।

 

Promotion