সিনেমায় মহাকাশ যাত্রা আর সঙ্গে অশরীরী অমনিবাস মিলে মিশে তৈরি হয়েছে প্রসেনজিৎ চৌধুরীর ‘দিন রাত্রির গল্প’। অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে অবশেষে বড় পর্দায় মুক্তি পেল ছবিটি। শুনতে অবাক লাগলেও এটিই বাংলায় প্রথম স্পেস ফিকশন। বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এক অভিনব প্রয়াসটি সৃষ্টি হয়েছে দুটি আলাদা গল্প নিয়ে। গল্পের একদিক যেমন মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার মত উজ্জ্বল, অন্য দিকে তেমনই একটা ভয় জর্জরিত রাতের মতোই অন্ধকার।
অভিনয় – ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন রজতাভ দত্ত এবং সুপ্রীতি চৌধুরী। রজতাভ দত্তের অভিনয় প্রশংসাযোগ্য, প্রতিটি ছবিতে এমন কিছু অদ্ভুত চরিত্র নির্মাণ করেন যা চলচ্চিত্রটিকে আলাদা মাত্রায় নিয়ে যায়।এই ছবির ক্ষেত্রেও তাই। বরাবরই নিজের অভিনয় নিয়ে উনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভালোবাসেন। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়েনি। পাশাপাশি একটি সংবেদনশীল, বুদ্ধিমতি নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুপ্রীতি চৌধুরী। যা সহজেই দর্শকদের মন জয় করতে সক্ষম। এছাড়াও অভিনয় করেছেন রায়তী বসু, প্রদীপ মুখার্জি, দেবেশ রায়চৌধুরী, সৌরভ মুখার্জি এবং রুমকি চ্যাটার্জি প্রমুখ।
ভাবনা – অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা, সততা, সাহসিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গেই ভাবনা পরিবেশন করা হয়েছে। গতানুগতিকতার সসপ্যানে ফ্রাই হওয়া মানসিকতার বাইরে বেড়িয়ে এই ছবি আসলে অন্য ধাঁচে ভাবায়। গল্পের টান টান উত্তেজনা ও ঘনীভূত হয়ে আসা রহস্য দর্শককে প্রেক্ষাগৃহে বেঁধে রাখার জন্য যথেষ্ট।
প্রযোজনা ও পরিচালনা – ছবিটির প্রযোজনার গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন সুপ্রীতি চৌধুরী ও পরিচালনায় রয়েছেন প্রসেনজিৎ চৌধুরী।
চিত্রনাট্য – ছবিটির চিত্রনাট্য সুপ্রীতি চৌধুরী ও প্রসেনজিৎ চৌধুরী যুগ্ম ভাবে লিখেছেন। যথেষ্টই মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন তারা তাদের কাজে।
সিনেমাটোগ্রাফি – সিনেমাটির সমস্ত দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করেছেন মৃন্ময় মন্ডল। তিনি এর আগেও বেশ কিছু স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবিতে নিজের জাত চিনিয়েছেন। কিন্তু এই ছবিতে কোথাও সমস্ত কিছু পেরিয়ে ক্যামেরাকেই একটি চরিত্র বানিয়ে ফেলেছেন।
এডিটিং – সম্পাদক প্রদীপ দাস নিজ দক্ষতায় এই চলচ্চিত্রটিকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়েছেন।
মিউজিক ও সাউন্ড ডিজাইন – ছবিতে নিদারুণ বিচক্ষণতার সঙ্গে দৃশ্য অনুযায়ী আবহ-সঙ্গীত পরিবেশিত হয়েছে। একটি বিশেষ দৃশ্যে গ্রামোফোনের ব্যবহার এক আলাদা মাত্রা তৈরি করেছে।
ভিএফএক্স – এই ছবির ভিএফএক্স বেশ কিছুটা সঞ্জীবনী সুধার কাজ করেছে। আর এই প্রাণ সৃষ্টির কারিগর হলেন দীপঙ্কর দাস।
রেটিং – চোখ বন্ধ করে ছবিটিকে ১০/৮ দেওয়াই যায়। সব শেষে বলাই বাহুল্য, পরিচালক প্রসেনজিৎ চৌধুরী বাংলা চলচ্চিত্র জগৎকে এক নতুন দিগন্তের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছেন। আশা করি, আগামী দিনেও তিনি তার অভিনবত্ব বজায় রাখবেন।
Author Profile
