কাটাকুটি

ব্যারাকপুর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজের সিনে-পার্বণ খুলে দিল ভাবনার প্যান্ডোরা বাক্স

ছবিওয়ালা – অন্বিত দাস, মৃন্ময় সরকার, বৈজয়ন্ত রায়

 

যে ছবিগুলি এখনও আনুষ্ঠানিক মুক্তি পায়নি সেগুলির পোস্টার বা সম্পর্কিত ছবি দেওয়া হল। বাকি মুক্তি প্রাপ্ত ছবির ইউটিউব লিংক আপনারা প্রতিবেদনের ভেতরেই পাবেন।

 

আজকাল সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট অথবা যে কোনও ডিজিট্যাল প্ল্যাটফর্মে নজর রাখলেই আমরা দেখি একের পর এক তৈরি হচ্ছে শর্ট ফিল্ম। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বস্তাপচা স্ক্রিপ্ট নিয়ে মানুষের অঘোষিত ও অস্বীকৃত মৌলিক কিছু চাহিদাকে লক্ষ্য বানিয়ে ‘শর্টফিল্ম’ নামের মোড়কে কিছু অখাদ্যের জন্ম দেওয়া হচ্ছে। তবে এই খারাপের মধ্যেও খুশির খবর এই যে, বেশ কিছু ব্যতিক্রমী কাজও হচ্ছে। সবাই অর্ধ-উলঙ্গ শরীর দেখানোর মাধ্যমে শর্টফিল্মের নামে নীল ছবি তৈরির প্রতিযোগিতায় নামেননি। কেউ কেউ আশপাশের বাস্তব কিছু ঘটনা এবং তার প্রভাবকে উপজীব্য করে অসাধারণ কিছু কাজ করে চলেছেন। দুঃখের বিষয় হলো তারা সংখ্যায় নগণ্য এবং কর্পোরেট পৃথিবীতে অনেকটাই কোণঠাসা। নিজেদের মেলে ধরার জন্য বহু ক্ষেত্রেই এদের পাশে দাঁড়ানোর মতো ‘হাবিজাবি স্পনসর’ নেই। কাজেই অপ্রিয় হলেও সত্যি এটাই যে এদের কাজ করার জায়গা খানিক প্রশস্ত হলেও সামর্থ্যের জায়গাটি সীমাবদ্ধ। কিন্তু এই যোদ্ধাদের কাছে অক্সিজেনের কাজটি করে শর্ট-ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। আর বর্তমান সময় সিনেমাপ্রেমীদের কাছে প্রত্যাশার স্বর্গে পরিণত হয়েছে ব্যারাকপুর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজের আন্তর্জাতিক শর্ট-ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। যার পোশাকি নাম ‘সিনে-পার্বণ’।

২০১৯ সালের ২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্যারাকপুর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজের বিভূতিভূষণ হলে আয়োজিত হয় এবারের ‘সিনে-পার্বণ’। মোট ২২ টি স্বল্প-দৈর্ঘ্যের ছবি এই উৎসব তথা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রধান অতিথি তথাগত মুখার্জী ক্ল্যাপস্টিকের মাধ্যমে এই সেলুলয়েড-যজ্ঞের উদ্বোধন করেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সত্রাজিৎ পাল যিনি এই ছবির সহ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।  তথাগত মুখার্জীরই পরিচালিত, দেবলীনা দত্ত এবং চিরঞ্জিত চক্রবর্তী অভিনীত ‘ইউনিকর্ন’ ছিল সিনে-পার্বণের উদ্বোধনী ছবি। উল্লেখ্য এই ছবিটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় নি।

‘ইউনিকর্ন’ আসলে রূপকথার মোড়কে স্বাধীনতার কথা বলে। তথাগত বলেন, সমকালীন সময়ে আমরা স্বাধীনতাহীনতায় ভুগি। ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে এখনও মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠিত হয় নি। তাই ইউনিকর্ন আসলে সেই স্বাধীন ভাবনারই প্রতিক্রিয়া। আসলে একটি সভ্য এবং অসভ্য দেশের গল্প বলা হয়েছে ছবিটিতে। তিনি আরও বলেন, তার আশা, শিল্পমাধ্যম কারও তাঁবেদার হয়ে থাকবে না।

এরপর প্রতিযোগিতা বিভাগের প্রথম ছবি হিসেবে প্রদর্শিত হল ধ্রুবতারা। এই শর্ট-ফিল্মটির থিম আত্মহত্যা। ইদানীং সময়ে আত্মহত্যা বিষয়টি বহু শর্ট-ফিল্মের বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে। মাঝে একটি করুণ ট্যুইস্ট থাকলেও সদর্থক ভাবনা দিয়েই শেষ হয় ১৯ মিনিটের এই নিবেদনটি।

ছবির নাম ‘ব্রোকেন’। এই ছবির অলঙ্কার এবং অহঙ্কার একইসঙ্গে হল মন্তাজ। এই মন্তাজকে পুঁজি করে একই ঘরের মধ্যে একই চরিত্র নিয়ে বেস্ট এডিটিংয়ের শিরোপা পেলেন সায়ন কুন্তি। গভীর মনোযোগ সহকারে ছবিটি দেখলে খুঁজে পাওয়া যাবে ঘটনাপ্রবাহের গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা।

পরবর্তী ছবির নাম কপটি – উপেক্ষা। ছবিটি এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে মুক্তি পায়নি। ছবির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল, প্রতিবাদ অবশ্যই জরুরী, কিন্তু তার থেকেও বেশি জরুরী সঠিক রাস্তায় প্রতিবাদ।

 

১৩ মিনিটের ‘ইয়েলো শার্ট’ কীভাবে সময় চুরি করে নিল তা বোঝাই গেল না। দুর্গাপুজোর বিজয়ায় আমাদের আনন্দ শেষ হলেও, কিছু প্রান্তিক মানুষের আনন্দ আসলে সেইদিনই যে শুরু হয় তা অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটে উঠলো এই ছবিটিতে। তারই স্বীকৃতি হিসেবে এটি জিতে নিল প্রথম রানার-আপের পুরস্কার। এই ছবিটিও আনুষ্ঠানিক ভাবে এখনও মুক্তি পায় নি।

সম্পর্কের টানাপড়েন নিয়ে বর্তমান সময়ে বহু সিনেমা দেখলেও, সম্পর্কের সম্মান এবং মূল্যবোধ নিয়ে অন্যরকম আঙ্গিকের ছবি খুব একটা চোখে পড়েনি। সেরকমই একটি ছবি ‘মৃত চিঠি’ যেখানে মূল চরিত্র একটি পাগলের মৃত্যু হলেও কোথাও গিয়ে জিতে যায় সম্পর্ক। খুব তাড়াতাড়ি মুক্তি পেতে চলেছে এই ছবিটি।

এরপরে পালা বাংলাদেশের ছবি “থার্টিন মিনিটস বিফোর”। স্বল্প-দৈর্ঘ্যের ছবিটিতে ফুটে ওঠা ভয়ার্ত প্রতিচ্ছবি মন জিতে নেয় দর্শকদের।

চাহিদা, ট্রামের টিকিট, সারল্যের মতো কিছু বিষয়কে নিয়ে আবর্তিত হয়েছে ‘টিকিট’ সিনেমাটির গল্প। অসামান্য অভিনয়ের দরুণ এই ছবির অভিনেতা কাজল শম্ভূ জিতে নিলেন সেরা অভিনেতার শিরোপা।


পরের ছবিটির নাম ‘আংশিক’। এটির থিম ভালো হলেও সঠিক বাস্তবায়ন হয়নি ছবিতে। নকশাল আমলের এক প্রেম বাধার পাঁচিল টপকে কি আদৌ পূর্ণতা পায়? সেই নিয়েই তৈরি ‘আংশিক’।

‘যদি জানতে’ ছবিটির ভাবনা বাকি ছবিগুলির তুলনায় সেভাবে বলিষ্ঠতার স্বাক্ষর রাখতে পারে নি। মাঝে বেশ কিছু দৃশ্য খাপছাড়া লেগেছে। যদিও সাম্প্রতিক কালের এক জনপ্রিয় ট্রেন্ড প্র্যাঙ্ক কীভাবে প্রিয়জনের মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে সেটিই বুঝিয়েছে ছবিটি। সেদিক থেকে অবশ্য শিক্ষণীয় ছবির স্বীকৃতি দাবী করতেই পারে ‘যদি জানতে’।

“ENDLESS DEVOTION The Grandeur of Boro Maa” ছবিটি আদ্যন্ত ধর্মীয় বিষয়কেন্দ্রিক তথ্যচিত্র। তবে একেবারেই ধর্মের আগ্রাসন বা প্রচার নেই ছবিতে। নৈহাটির বিখ্যাত কালীপুজো হল বড় মা-এর পুজো। সেই উপলক্ষ্যে যে বিশাল জনসমাগম হয় এবং ঐতিহ্য মেনে সম্পন্ন হয় এই বিশালাকার পুজো সেটিই ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। এটি জিতে নিয়েছে স্পেশ্যাল জুরি অ্যাওয়ার্ড।

এভাবেই শেষ হল প্রথম দিনের ছবি প্রদর্শন। এই চলচ্চিত্র উৎসবের দায়িত্ব বহনের এক বিশ্বস্ত কাঁধ ছিলেন ব্যারাকপুর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজের ফিল্ম স্টাডিজের অধ্যাপক দেবাশিস চক্রবর্তী। তিনি একান্ত আলাপচারিতায় এক্সক্লুসিভ অধিরথকে জানালেন, শর্টফিল্ম দেখানোর মঞ্চ সেভাবে খুব একটা নেই। তাই মানুষের কাছে এই মাধ্যমটিকে পৌঁছে দেওয়া ছাড়াও দর্শককে নতুন ভাবনার সঙ্গে আলাপের সুযোগ করে দেওয়াও আমাদের উদ্দেশ্য। দর্শকের একটি চোখ তৈরি হওয়াটাও জরুরী। চাহিদা তৈরি হলেই  একটি শর্টফিল্মের একটি বাজার তৈরি সম্ভব। কর্পোরেটরাও এই মাধ্যমকে তুলে ধরার জন্য লগ্নি করবেন। তবে এই প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, এই কর্পোরেট যুগে নিজস্বতা এবং স্বাধীনতার স্ট্রাগলটি আসলে সবসময়ই চলতে থাকে। তার মধ্যেও নিজস্ব বৃত্ত তৈরি করার লড়াইটা লড়েই নিতে হবে।

তাজমহল সঙ্গে শাহজাহানের নাম উচ্চারিত হলেও হাজারো লাখো শ্রমিকের অবদানের কথা স্বীকার করতেই হয়। ঠিক তেমনই এই সিনে-পার্বণে মঞ্চের পিছনে থেকে লড়ে গিয়েছেন ছাত্ররা। এই নতুন যৌবনের দূতেরাই কিন্তু সিনে-পার্বণের সাফল্যের রথের দড়ি টেনে গিয়েছেন। ছাত্রদের তরফে শুভ্রজিৎ শীল বলেন, সিনে-পার্বণ ২০১৯ এইবার চতুর্থ বছরে পড়লো। আমাদের কাছে শর্ট-ফিল্ম দেখানোর থেকেও বেশি মজা নিজেদের সেগুলি দেখতে। আমরা চেষ্টা করেছি সেই সব ছবি দেখাতে যার গুণগত মান যথেষ্ট ভালো থাকা সত্ত্বেও সেগুলি প্রচারের আলো থেকে বঞ্চিত। এই শর্টফিল্ম আমাদের পড়াশুনার ক্ষেত্রেও কাজে লাগবে, যেহেতু আমরা বেশিরভাগই ফিল্ম-স্টাডিজের ছাত্ররা জড়িয়ে ছিলাম এই ফেস্টিভ্যালের সঙ্গে। সিনে-পার্বণের সঙ্গে তাই জড়িয়ে থাকতে পেরে আমরা গর্বিত।

দ্বিতীয় দিন পথের পাঁচালির ৫০ বছর পূর্তি নিয়ে তৈরি ছবি ‘পথের পাঁচালি আ লিভিং রেসন্যান্স’ প্রদর্শিত হয়। ছবির দুই পরিচালকের একজন জয়দীপ মুখার্জী তুলে ধরেন ছবিটি ঘিরে তার স্মৃতিকথা। আয়োজকদের তরফে এই অসামান্য কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে বরণ করে নেওয়া হয়।

এদিনের প্রতিযোগিতা বিভাগের প্রথম ছবি ‘বিলয়া’ জিতে নিল হৃদয়। সিনে-পার্বণের দ্বিতীয় রানার-আপের তকমা গায়ে সাঁটালো ‘বিলয়া’। সিনেমার প্রতিটি দৃশ্যই নতুন কিছু উপহার দিলেও, শেষ দৃশ্যে রয়েছে মোচড়। সেই মোচড় কতোটা উদ্বেল করবে আপনাদের মনকে? তা জানার জন্য ছবিটির আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তির প্রহর চাক্ষুষ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে আপনাদের।

 

পরবর্তী ছবির হিসেবে দেখানো হয় জিষ্ণু যেটি ইতিমধ্যেই বেশ সমালোচিত হয়েছে। এক ছা-পোষা সাধারণ মানুষের দ্বৈত-সত্ত্বা নিয়ে তৈরি জিষ্ণু। একদিকে দমে যাওয়ার স্টেশন তো অন্যদিকে জীবনযুদ্ধে জিতে যাওয়ার হাতছানি। পেন্ডুলামের মতো সারাক্ষণ দর্শকের ভাবুক মনকে দুলিয়ে যায় এই শর্ট-ফিল্মটি।

‘হাফ এম্পটি গ্লাস’, গন্ধ পাচ্ছেন কিছু? আজ্ঞে, ঠিকই ধরেছেন। আমাদের জীবনের সদর্থক অংশগুলি, যেগুলিকে আমরা আসলে দেখেও দেখিনা, সেই বিষয়বস্তুকেই ছুঁতে চেয়েছে এই ছবির কাহিনী।

‘লাইফ হেয়ার অ্যান্ড নাউ’ ছবিটিতে জীবন এখন কিভাবে চলছে তারই একটা রূপ দেখানো হয়েছে। প্রথমে দেখা যায় ঠাকুরের সামনের বাক্সে অনেক টাকা কিন্তু আবহ শব্দটি হয় এক অন্ধ, বৃদ্ধ মানুষ যিনি দুটো পয়সার জন্য ভিক্ষা করছেন। তারপর দেখা যায় বন্যা দুর্গত অঞ্চল এর দৃশ্য কিন্তু আবহ শব্দটি মানুষের হুল্লোড় এর। এটা সামাজিক দিক। এই সামাজিক দিকের স্বপ্ন থেকে জেগে একজন মানুষ যখন নিজের ব্যক্তিগত জীবনে এলো তখন দেখা গেল সবাই আমরা সবাই কিছুর বা কারোর জন্য অপেক্ষা করে চলেছি। এই সমাজজীবন ও ব্যক্তিগত জীবনের কনট্রাস্ট সবাই নিজের মতো করে চালিয়ে যায় আর জীবন এভাবেই চলে।

 

এরপর দর্শকদের মুড চেঞ্জ করে দিলো ‘চেকমেট’। টানটান উত্তেজনার মোড়কে এই থ্রিলারধর্মী ছবিটির রসদ দাম্পত্য জীবনের অসুখ।

 

মন ছুঁয়ে গেল বহুরূপী। “পাকস্থলীতে ইসলাম নেই, নেইকো হিন্দুয়ানী। তাতে যাহা জল তাহা পানি।”  এই বার্তাই তুলে ধরলো ‘বহুরূপী’। বেস্ট স্ক্রিন-প্লে অ্যাওয়ার্ড জিতে নিলো এই ছবি।

 

পরবর্তী ছবি ছিল আয়না। পুরুলিয়ার এক গরিব পরিবার, যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। নিজের মা-কে ভালবেসে নিজের চেষ্টাকে উজাড় করে কীভাবে মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে আয়না নিয়ে আসে তার কন্যাসন্তান, এটি সেই গল্প। সেই আয়নাতে উচ্চাকাঙ্খার বদলে কোনওরকমে শান্তিতে বেঁচে থাকার প্রতিফলনই চোখে পড়ে। সিনে-পার্বণের সেরা সিনেমার শিরোপা আয়নার মাথায় উঠলো।

 

‘হাতের মন’, ছবিটির নামেই দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার বিষয়বস্তু। নতুনত্ত্ব থাকলেও মনে দাগ কাটতে একেবারেই ব্যর্থ ছবিটি।

‘স্বপ্নচারিণী’ ছবিটি পরবর্তী নিবেদন হিসেবে প্রদর্শিত হয়। বহু বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সৌমিত্র খাড়া এটির পরিচালক। স্বাভাবিকভাবেই দর্শকদের প্রত্যাশাপূর্ন করেছে ছবিটি। হিন্দিতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের ব্যাবহার অন্য মাত্রা দিলো বিয়োগান্তক প্রেমের ছবিটিতে। বেস্ট ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরের সম্মান পেল ‘স্বপ্নচারিণী’।

 

শিশুর শৈশবকে অনুশাসনের স্টিম রোলারে পিষে দেওয়ার গল্প ‘স্বর ও সতী’। প্রত্যাশা মতোই সেরা সিনেম্যাটোগ্রাফির পুরস্কার ঘরে তুললো এই শর্টফিল্মটি।

 

কংক্রিট অঞ্চল ছবিটির চিত্রনাট্য এগোচ্ছিলো হু হু গতিতে। কিন্তু শেষ দৃশ্য বুঝতে গিয়ে তৈরি হল সমস্যা। আত্মহত্যাই কি তাহলে সমাধান? সমস্যা থেকে পালিয়ে আসাটাই কি সমাধান হতে পারে? এক নয়া বিতর্কের জন্ম দিয়ে গেল ছবিটি।

 

‘ভালোবাসার জন্যে, ভালোবাসার সঙ্গে’, ছবিটির নির্মাণের পরতে পরতে লেগে রয়েছে মূল্যবোধ। একটি মেয়ে কীভাবে তার কর্মজীবন ও সংসার আগলে তার বাবাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আগলে রাখে সেটিই থিম এই শর্টফিল্মটির। স্পেশ্যাল জুরী অ্যাওয়ার্ড পেল ছবিটি।

জুরী দলের অন্যতম সদস্য প্রখ্যাত পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের ‘বিশ্বাস নাও করতে পারেন’ ছবিটির স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে শেষ হল এই সিনে-পার্বণ। ছবিটি প্রতিযোগিতার বাইরে ছিল। প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন এই আন্তর্জাতিক শরতফিল্ম ফেস্টিভ্যালের চতুর্থ পর্বে সিনেমার গুণমান যথেষ্ট ভালো লেগেছে। সিনেমা তৈরি এবং দেখবার এই যাপনটি জারী থাকুক।

সমাপ্তি পর্বে সবাইকে চমকে দিয়ে বিশেষ অতিথি হিসেবে হাজির হন মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিও এই সিনে-পার্বণের প্রশংসা করেন দরাজ গলায়। দুই দিনের এই যজ্ঞের সমাপ্তি ঘোষণা করে কলেজের অধ্যক্ষ মনোজিৎ রায় আগামী বছর ওই একই তারিখে(২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে) ফের সিনে-পার্বণ অনুষ্ঠিত করার অঙ্গীকার করেন।

আমরা অর্থাৎ এক্সক্লুসিভ অধিরথ গণমাধ্যম এই অনুষ্ঠানের অফিসিয়াল মিডিয়া পার্টনার ছিলাম। সেলুলয়েডীয় জগতে গ্রহণযোগ্য এই ভাবনার অভিযান জারি থাকুক। অদূর ভবিষ্যতে আরও রুচিশীল ও সময়োপযোগী উপস্থাপনার সাক্ষী হওয়ার সুযোগ দেবে সিনে-পার্বণ এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা। যাঁরা নিজেদের বাংলা সংস্কৃতির সেবক বা শিল্পবোদ্ধা বলে দাবি করেন তাঁদের কাছে একটি ছোট অনুরোধ রাখছি। স্রোতের সঙ্গে গা না ভাসিয়ে যাঁরা ব্যতিক্রমধর্মী এই উদ্যোগ নিচ্ছেন, সেইসব পরিচালকদের পাশে এসে দাঁড়াবেন-ব্যাস, এটুকুই। ভয় নেই! এঁরা আপনাদের থেকে কড়কড়ে নোট বা ব্যাংক চেক চাইবেন না। নিজেদের পাশে আপনাদের অভিভাবকসুলভ উপস্থিতি কামনা করে আর হয়তো এক ভাঁড় চা-ই যথেষ্ট।

Promotion