‘বর্ধমান’ নামটি কমবেশি সকলেরই শোনা। বেড়াতে যাওয়ার গন্তব্য হোক উত্তরবঙ্গ অথবা শান্তিনিকেতন কিংবা উত্তরপ্রদেশ বা দিল্লি। বর্ধমান ছুঁয়েই আপনাকে যেতে হবে। এটি পশ্চিমবঙ্গের এক অন্যতম বড় জেলা। বর্ধমানের ইতিহাস জানতে গেলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে ৫০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে। গলসি থানার মল্লসারন গ্রামে উদ্ধার হওয়া একটি ষষ্ঠ শতকের তাম্রপত্রে বর্ধমানের নামোল্লেখ পাওয়া যায়। বর্তমানে বর্ধমান জেলা পূর্ব এবং পশ্চিম বর্ধমানে বিভক্ত। বর্ধমান শহর পশ্চিম বর্ধমানের প্রাণকেন্দ্র।
এই প্রাচীন নগরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান আছে, যেগুলো পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও উল্লেখযোগ্য। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র বর্ধমান রাজবাড়ি। সমগ্র শহর জুড়ে ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন স্থাপত্য। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় রাজবাটি ক্যাম্পাস, রাজ কলেজ, মহারাজাধিরাজ উদয়চাঁদ মহিলা কলেজ; এগুলি রাজবাড়ির অংশ হিসেবেই পরিচিত। দেবী সর্বমঙ্গলা বর্ধমান রাজবংশের কূলদেবী। এটি একটি অন্যতম সতীপীঠ হিসেবেও পরিচিত। প্রচলিত লোককথা অনুযায়ী এখানে সতীদেহের নাভি পতিত হয়েছিল। এই মন্দিরটির আশেপাশে আরও অনেক মন্দির ও শিবলিঙ্গ রয়েছে।

বর্ধমানের মহারাজা বিজয় চন্দ্র মহতাব ১৯০৩ সালে লর্ড কার্জনের বর্ধমান পরিদর্শন উপলক্ষে কার্জন গেট স্থাপন করেন। কার্জন গেট বি সি রোডের উপর অতন্দ্র প্রহরীর মতো বর্ধমানকে পাহারা দিচ্ছে। এখান থেকে রাজবাড়ি মাত্র এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বর্ধমান স্টেশন থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে বর্ধমান-সিউড়ি জাতীয় সড়কের ধারে নবাবহাটে একশ আট শিবমন্দির অবস্থিত। এখানে মোট ১০৮ টি শিবলিঙ্গ আছে। ১৭৮৮ সালে এটি তৈরি হয় এবং একশ আট শিবমন্দির নামে জনপ্রিয় হয়। বর্ধমানের রাণী বিষ্ণুকুমারীর নির্দেশে এই মন্দিরটি বানানো হয়। প্রত্যেক বছর ধুমধাম করে এক সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মহাশিবরাত্রি পালন করা হয়।

এখানে মহান বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার নামানুসারে একটি তারামন্ডল রয়েছে। এটি কলকাতার বিড়লা তারামন্ডলের পর রাজ্যের দ্বিতীয় তারামন্ডল। এছাড়াও এখানে একটি বিজ্ঞান সংরক্ষণশালা আছে যা সায়েন্স সেন্টার নামে পরিচিত। এগুলি গোলাপবাগের পূর্ব দিকে রমনা বাগানের কাছে অবস্থিত। বর্ধমান সাব-ডিভিশনের অন্তর্গত বন দফতর হল রমনা বাগান। গোলাপবাগের পূর্ব দিকে এটি অবস্থিত। এই অরণ্যটি অভয়ারণ্য হিসেবে চিহ্নিত। এটি ডিয়ার পার্ক নামেও পরিচিত। এখানে হরিণ, কুমির সহ বিভিন্ন রকম পাখি দেখা যায়। কার্জন গেটের কাছে বহু পুরোনো একটি চার্চ আছে। পার্কাস রোডে অপর একটি বহু পুরনো চার্চ রয়েছে। এদের মধ্যে একটি ক্যাথলিক চার্চ, অপরটি প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চ।

বর্দ্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজবাড়ি ক্যাম্পাসের পূর্বদিকে একটি অসাধারণ স্থাপত্য কলার নিদর্শন পাওয়া যায়, যেটি হাওয়া মহল নামে পরিচিত। এটি একটি সুন্দর পরিখা দিয়ে ঘেরা। এপার থেকে ওপার যাওয়ায় জন্য নৌকা চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রচলিত লোককথা অনুযায়ী এটি রাণীর প্রমোদ উদ্যান হিসেবে জানা যায়। রাণী বিকেলে সখী পরিবেষ্টিত হয়ে এখানে ভ্রমণে আসতেন বলে শোনা যায়।

১৮৯০-৯৪ সালের মধ্যে বর্ধমান টাউন হলটি তৈরি হয় এবং লালা বংশগোপাল নন্দীর অবশিষ্টাংশ সংরক্ষণের জন্য বর্ধমান পৌরসভাকে দান করা হয়। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ১৯৯০ সালে এই হলটি মেরামত করায় এবং বর্তমান রূপ দান করে। আগে এটি মাত্র ৭০৪ বর্গফুট ছিল, এখন এটি ২৪০০ বর্গফুটের এবং এখানে প্রায় ৫০০ জনের বসার উপযুক্ত ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও শের আফগানের সৌধ, দামোদর নদী, দামোদরেশ্বর শিব মন্দির, বীরহাটা কালীবাড়ি, সুফী পীরের দরগা, কৃষ্ণ সায়র উদ্যান প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান। এই তালিকায় নবতম সংযোজন হল বর্ধমান রেল স্টেশনের কাছে নির্মীয়মাণ একটি কেবল-স্টেড ব্রিজ।
এই হল বর্ধমান যা পূর্বে শরিফাবাদ নামেও পরিচিত ছিল। ২৪ তম জৈন তীর্থঙ্কর মহাবীর বর্ধমানের নামানুসারে নামাঙ্কিত এই শহরের প্রতিটি কোণায় মণি-মুক্তোর মতো ছড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক স্থান। যদিও পর্যটন শিল্পের দিক দিয়ে বললে, বর্ধমানের স্থান লাস্ট বেঞ্চেই হবে। তবুও আজ এখানে খুঁজে পাওয়া যায় একটুকরো ইতিহাস।
Author Profile
Latest entries
EXCLUSIVE NEWS2018.12.11Youth Convention of Indian Youth Federation cultivates the crops of Consciousness(Translated)
প্রত্যাশার পারদ2018.06.29Palash Sarkar – An Eminent Tabla-player of Hooghly
খেলার ক্ষণ2018.06.11India Crave their name in Inter-continental cup by defeating Kenya
খেলার ক্ষণ2018.06.07Kiwis snatched the prey from the Blue Tigers (Translated)